প্রথম মানুষ হযরত আদমের ঐরশ থেকে জন্মপ্রাপ্ত আরকোনো মানুষটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হলো না, যিনি সম্পুর্ণ নিষ্পাপ। যদিও আদম (আঃ) ছিলেন পূতপবিত্র, খোদার নিজের সুরতে গড়া, কিন্তু দুঃখের বিষয়, তিনি কুলটা ইবলিসের কুটচালে ধরা খেলেন, খোদার সুমহান আজ্ঞা তুচ্ছজ্ঞান করে বসলেন, ফলে তাদের বিতাড়িত হতে হলো খোদার মনোনীত বাগান-বাড়ি এদন-কানন থেকে। তাঁরপর তাঁর ঔরষ থেকে সকল মানুষের জন্ম হয়েছে, জন্ম নিয়েছে প্রত্যেকে বিদ্রোহি মনোভাব নিয়ে, পাপ তাদের মধ্যে, তাদের অস্থিমজ্জার মধ্যে ওতপ্রোতভাবে আছে মিশে। আর তা তারা সকলেই জানে বলে ধর্মকর্ম পালন করে আসছে বোধ বুদ্ধি জাগ্রত হবার পর থেকে।
পূজা-অর্চনা, ধর্মীয়গ্রন্থ নিয়মিত অধ্যয়ন, অজিফা মুখস্ত করে নিয়মিত চর্চা করা, নামাজ-রোজা পালন করা, হজ্জ-যাকাত কোরবানি, দান-খয়রাত ইত্যাদি তারা পালন করে থাকে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থাৎ ঘামে-শ্রমে অর্জিত অর্থ ব্যয় করার মাধ্যমে। অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ আছে, যারা কখনোই চাতকের মতো তাকিয়ে থাকে না, এক ফোঁটা বিদেশি অর্থের জন্য, অর্থ পেলেই তবে অমুক অমুক প্রজেক্ট শুরু করবে বলে। অথচ দেখেছি এমন এক দল রয়েছে, আমাদের দেশে, যারা ইভানজেলিকাল ক্রশেড প্রচার অভিযান শুরু করবে বিদেশি দান পাবার পরে। তারাই উত্তম যারা নিজেদের পকেটের পয়সা, তা যতটা সামান্যই হোক না কেন, ব্যয় করে প্রচার কাজ চালিয়ে চলছে। কথায় আছে, ”ব্লাঙ্কেট অর নো ক্লাঙ্কেট” কোনো ব্যাপার নয়, খোদার শুকরিয়া হোক সদা-সর্বদা।
চক্ষুষ্মানদের দায়িত্ব হবে, যে সকল অন্ধব্যক্তি অর্থাৎ সাদাছড়ি নিয়ে চলাচল করছে, তাদের পথ দেখিয়ে দেয়া, তাদের পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়া। যেমন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের কাছে প্রশ্ন করা চলে, আপনি যা কিছু পড়ে চলছেন, তার অর্থ বা মর্মার্থ কি সম্পূর্ণ বুঝতে পারছেন (প্রেরিত ৮ ঃ ৩০)? আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, পাককালামের অর্থ অনেকেই বুঝতে পারে না। হয়তো অনেকেই পড়তে পারে, যেমন ছোটো ছেলেপুলে একটা লাইন বা একটা শব্দ বানান করে নানানভাবে পড়ে থাকে, কতোটা অক্ষর, কতোটা স্বরবর্ণ আর কতোটা ব্যাঞ্জনবর্ণ, তাও বলতে পারে, তবে অমন কতিপয় শব্দ একত্রিত হয়ে যে কি বিষয়বস্তু বুঝাতে চাচ্ছে, তা হয়তো বলতে পারবে না। সুতরাং পাককালাম বানান করে করে পড়লেই যে সে উক্ত কালামের অর্থ-মর্মার্থ বুঝে ফেলেছে, তা বলি কি করে?
বহু অফিসার দেখেছি একদিকে ঘুষখোর আর একদিকে এবাদত বন্দেগিতে সবার আগের কাতারে তার অবস্থান! অবশ্য এদের উপাধি দেয়া হয়েছে ভন্ড বা হিপেক্রাট। কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কালামের মর্মার্থ যদি জানতে পারেন এবং তা অমান্য করা হলে কতোটা শাস্তি বা গজব উক্ত ব্যক্তির উপর পতিত হবে, তা যদি তরা বুঝতে পারতো, তবে সাথে সাথে অপকর্ম পরিত্যাগ করে, সাধুসন্তে পরিণত হবার জন্য, গায়ে ছাই মেখে, খোদার দরবারে বিলাপ শুরু করে দিত।
খোদা কারো শত্র“ নন, তিনি সকলকেই আন্তরিক মহব্বত করেন, একটি সন্তান হারিয়ে যাক বা খোয়া যাক, অথবা মারা যাক তা মহান রাব্বুল আলামিনের কাম্য হতে পারে না। বহু মা দেখেছি, দুষ্ট ছেলেকে শাসন করছে, মুখে বলে চলছে, “তোকে মেরেই ফেলব, চড়-থাপ্পর মারছে, যতোটা ক্ষিপ্ত বেগে হাতটা চালাচ্ছে, ছেলের গন্ডের কাছে আসতে গিয়ে গতি হারিয়ে থাপ্পরের পরিবর্তে আদরে রূপ নিচ্ছে।
মাবুদ অবশ্যই তাঁর সৃষ্ট মানুষ, যাকে তিনি আশরাফুল মাখলুকাত বলে সম্মানের উপাধি দিলেন, তাদের নিয়ে গড়ে তোলা দরবার, অনন্তকাল ধরে রাখবেন। কথায় বলে আবাদান আবাদান কালের জিন্দেগি দিয়ে তিনি আমাদের সুরক্ষা করবেন। পাককালামে দেখা যায়, মাবুদ মাওলা প্রত্যয়ের সাথে ঘোষণা দিয়েছেন, “তোমরা শক্ত হও ও মনে সাহস আন। তাদের দেখে তোমরা ভয় পেয়ো না কিংবা কেঁপে উঠো না, কারণ তোমাদের মাবুদ আলাহই তোমাদের সংগে যাবেন। তিনি কখনও তোমাদের ছেড়ে যাবেন না বা ত্যাগ করবেন না” (দ্বিতীয় বিবরনী ৩১ ঃ ৬)।
আমরা এমন এক মাবুদের খাস রহমতে জীবন যাপন করে চলছি, যিনি সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয়, অতীতে যেমন ছিলেন, বর্তমানেও তেমনই আছেন আর অনন্তকাল ধরে তেমনই থাকবেন। পার্থিব ঝড়-ঝঞ্জা দুর্যোগ দুর্বিপাক তাকে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না, আসমান-জমিন ও তন্মধ্যে যা কিছু, দৃশ্য-অদৃশ্য রয়েছে, সবকিছুরই নির্মাতা হলেন তিনি। আহার-নিদ্রা বলতে তাঁর কিছুই নেই। তিনি হলেন মহব্বত, আর মহব্বতের কারণেই তিনি আমাদের ধরে রেখেছেন (১ ইউহোন্না ৪ ঃ ১৬)।
এই মাবুদই হলেন প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ) এর নির্মাতা। তিনি মাটি দিয়ে মাত্র একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন; তার পর তাকে দোয়া করেছেন, প্রজাবন্ত ও বহুবংশে পরিণত হবার জন্য। তিনিই বলেছেন নবীদের মধ্যে যেন আমরা ভাগাভাগি বা ভেদাভেদ না করি। ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত রাখছি সকলের নজরে দেবার জন্য। কোনো এক লোকের মেষের পাল রয়েছে; শত শত মেষের মালিক তিনি।
আমি প্রশ্ন করলাম এমন এক ব্যক্তিকে, কি করে তিনি উক্ত মেষগুলো ঠিকঠাক মত চরিয়ে বেড়ান। জবাবে বললেন, তাঁর রাখাল আছে। রাখালরা মেষ চরিয়ে বেড়ায়, ঘাস খাওয়ায়, কুয়োর কাছে নিয়ে পানি পান করায়, তাই বলে মেষপাল কেবল মালিকের নিজস্ব সম্পদ। পাল থেকে একটি মেষও যদি খোয়া যায়, তবে তবুও মালিকের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
একইভাবে মানুষ খোদার সৃষ্টি এবং তার এক বিশেষ সম্পদ, যাদের আশরাফুল মাখলুকাত বলে বিশেষ সম্মান দেয়া হয়েছে, আর এই মানুষগুলোকে সত্য সুন্দরের পথে পরিচালনা করার জন্য নবি-রাসুলগণের প্রয়োজন পড়েছিল। নবি-রাসুলগণ কেবলমাত্র খোদার ন্যয় সত্য-সুন্দরের পথই দেখাতে বাধ্য, আর তাদের হেফাযত করা তাদের উপর ন্যাস্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
একটা কাঁচের জগ কঠিন পাথরের উপরে পতিত হলে শত শত টুকরো হয়ে চারদিকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পরে। যতক্ষণ ওগুলোকে ঝাড়– দিয়ে একত্রিত করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত খন্ডগুলোর কোনো সাধ্য থাকবে না, সবগুলো একত্রিত হয়ে পুনরায় পূর্বের মতো আস্ত গ্লাসে পরিণত হওয়া। তেমন ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন এক দরদি ব্যক্তির প্রয়োজন, যিনি বিনষ্ট টুকরোগুলো একত্র করে, গ্লাসের কারখানায় নিয়ে গিয়ে, জ্বালিয়ে আর একটি সুন্দর গ্লাসে রূপ দান করবে।
মানবজাতির ক্ষেত্রে তেমন দরদি ব্যক্তি হলেন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ, যিনি সম্পূর্ণ বেগুনাহ ব্যক্তি, পরম করুনাময় আলাহপাকের কালাম ও পাকরূহ, কুমারী মরিয়মের গর্ভের মাধ্যমে মানবরূপ ধারণ করলেন। আর তিনিই হলেন সম্পূর্ণ একক বেগুনাহ ব্যক্তি। বিশ্বের পাপের কাফফারা পরিশোধ দেবার জন্য তিনি স্বেচ্ছায়, নিজের পূতপবিত্র রক্ত কোরবান করলেন মর্মবিদারক সলিবে, ফলে, কেবল বিশ্বাসহেতু, বিশ্বের তাবৎ গুনাহগার মানুষ মসিহের মধ্য দিয়ে নাজাত পেল, হতে পারলো সম্পূর্ণ স্নাতশুভ্র, পূর্ণাঙ্গভাবে বেগুনাহ এক নতুন মানুষ। আর এ সকল সম্ভব হয়েছে কেবল মহান রাব্বুল ইজ্জতের কুদরতের ফলে। “যদি কেউ মসিহের সংগে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল। তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে সব নতুন হয়ে উঠেছে। এই সব আলাহ থেকেই হয়। তিনি মসিহের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে আমাদের মিলিত করেছেন, আর তাঁর সংগে অন্যদের মিলন করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের উপর দিয়েছেন। এর অর্থ হল, আলাহ মানুষের গুনাহ না ধরে মসিহের মধ্য দিয়ে নিজের সংগে মানুষকে মিলিত করছিলেন, আর সেই মিলনের খবর জানাবার ভার তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন। সেজন্যই আমরা মসিহের দূত হিসাবে তাঁর হয়ে কথা বলছি। আসলে আলাহ যেন নিজেই আমাদের মধ্য দিয়ে লোকদের কাছে অনুরোধ করছেন। তাই মসিহের হয়ে আমরা এই মিনতি করছি, “তোমরা আলাহর সংগে মিলিত হও।” ঈসা মসিহের মধ্যে কোন গুনাহ ছিল না; কিন্তু আলাহ আমাদের গুনাহ তাঁর উপর তুলে দিয়ে তাঁকেই গুনারেহ জায়গায় দাঁড় করালেন, যেন মসিহের সংগে যুক্ত থাকবার দরুন আলাহর পবিত্রতা আমাদের পবিত্রতা হয়” (২ করিন্থীয় ৫ ঃ ১৭-২১)।
পূজা-অর্চনা, ধর্মীয়গ্রন্থ নিয়মিত অধ্যয়ন, অজিফা মুখস্ত করে নিয়মিত চর্চা করা, নামাজ-রোজা পালন করা, হজ্জ-যাকাত কোরবানি, দান-খয়রাত ইত্যাদি তারা পালন করে থাকে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থাৎ ঘামে-শ্রমে অর্জিত অর্থ ব্যয় করার মাধ্যমে। অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ আছে, যারা কখনোই চাতকের মতো তাকিয়ে থাকে না, এক ফোঁটা বিদেশি অর্থের জন্য, অর্থ পেলেই তবে অমুক অমুক প্রজেক্ট শুরু করবে বলে। অথচ দেখেছি এমন এক দল রয়েছে, আমাদের দেশে, যারা ইভানজেলিকাল ক্রশেড প্রচার অভিযান শুরু করবে বিদেশি দান পাবার পরে। তারাই উত্তম যারা নিজেদের পকেটের পয়সা, তা যতটা সামান্যই হোক না কেন, ব্যয় করে প্রচার কাজ চালিয়ে চলছে। কথায় আছে, ”ব্লাঙ্কেট অর নো ক্লাঙ্কেট” কোনো ব্যাপার নয়, খোদার শুকরিয়া হোক সদা-সর্বদা।
চক্ষুষ্মানদের দায়িত্ব হবে, যে সকল অন্ধব্যক্তি অর্থাৎ সাদাছড়ি নিয়ে চলাচল করছে, তাদের পথ দেখিয়ে দেয়া, তাদের পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়া। যেমন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের কাছে প্রশ্ন করা চলে, আপনি যা কিছু পড়ে চলছেন, তার অর্থ বা মর্মার্থ কি সম্পূর্ণ বুঝতে পারছেন (প্রেরিত ৮ ঃ ৩০)? আমরা নিশ্চিতভাবে জানি, পাককালামের অর্থ অনেকেই বুঝতে পারে না। হয়তো অনেকেই পড়তে পারে, যেমন ছোটো ছেলেপুলে একটা লাইন বা একটা শব্দ বানান করে নানানভাবে পড়ে থাকে, কতোটা অক্ষর, কতোটা স্বরবর্ণ আর কতোটা ব্যাঞ্জনবর্ণ, তাও বলতে পারে, তবে অমন কতিপয় শব্দ একত্রিত হয়ে যে কি বিষয়বস্তু বুঝাতে চাচ্ছে, তা হয়তো বলতে পারবে না। সুতরাং পাককালাম বানান করে করে পড়লেই যে সে উক্ত কালামের অর্থ-মর্মার্থ বুঝে ফেলেছে, তা বলি কি করে?
বহু অফিসার দেখেছি একদিকে ঘুষখোর আর একদিকে এবাদত বন্দেগিতে সবার আগের কাতারে তার অবস্থান! অবশ্য এদের উপাধি দেয়া হয়েছে ভন্ড বা হিপেক্রাট। কোনো ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কালামের মর্মার্থ যদি জানতে পারেন এবং তা অমান্য করা হলে কতোটা শাস্তি বা গজব উক্ত ব্যক্তির উপর পতিত হবে, তা যদি তরা বুঝতে পারতো, তবে সাথে সাথে অপকর্ম পরিত্যাগ করে, সাধুসন্তে পরিণত হবার জন্য, গায়ে ছাই মেখে, খোদার দরবারে বিলাপ শুরু করে দিত।
খোদা কারো শত্র“ নন, তিনি সকলকেই আন্তরিক মহব্বত করেন, একটি সন্তান হারিয়ে যাক বা খোয়া যাক, অথবা মারা যাক তা মহান রাব্বুল আলামিনের কাম্য হতে পারে না। বহু মা দেখেছি, দুষ্ট ছেলেকে শাসন করছে, মুখে বলে চলছে, “তোকে মেরেই ফেলব, চড়-থাপ্পর মারছে, যতোটা ক্ষিপ্ত বেগে হাতটা চালাচ্ছে, ছেলের গন্ডের কাছে আসতে গিয়ে গতি হারিয়ে থাপ্পরের পরিবর্তে আদরে রূপ নিচ্ছে।
মাবুদ অবশ্যই তাঁর সৃষ্ট মানুষ, যাকে তিনি আশরাফুল মাখলুকাত বলে সম্মানের উপাধি দিলেন, তাদের নিয়ে গড়ে তোলা দরবার, অনন্তকাল ধরে রাখবেন। কথায় বলে আবাদান আবাদান কালের জিন্দেগি দিয়ে তিনি আমাদের সুরক্ষা করবেন। পাককালামে দেখা যায়, মাবুদ মাওলা প্রত্যয়ের সাথে ঘোষণা দিয়েছেন, “তোমরা শক্ত হও ও মনে সাহস আন। তাদের দেখে তোমরা ভয় পেয়ো না কিংবা কেঁপে উঠো না, কারণ তোমাদের মাবুদ আলাহই তোমাদের সংগে যাবেন। তিনি কখনও তোমাদের ছেড়ে যাবেন না বা ত্যাগ করবেন না” (দ্বিতীয় বিবরনী ৩১ ঃ ৬)।
আমরা এমন এক মাবুদের খাস রহমতে জীবন যাপন করে চলছি, যিনি সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয়, অতীতে যেমন ছিলেন, বর্তমানেও তেমনই আছেন আর অনন্তকাল ধরে তেমনই থাকবেন। পার্থিব ঝড়-ঝঞ্জা দুর্যোগ দুর্বিপাক তাকে স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখে না, আসমান-জমিন ও তন্মধ্যে যা কিছু, দৃশ্য-অদৃশ্য রয়েছে, সবকিছুরই নির্মাতা হলেন তিনি। আহার-নিদ্রা বলতে তাঁর কিছুই নেই। তিনি হলেন মহব্বত, আর মহব্বতের কারণেই তিনি আমাদের ধরে রেখেছেন (১ ইউহোন্না ৪ ঃ ১৬)।
এই মাবুদই হলেন প্রথম মানুষ হযরত আদম (আঃ) এর নির্মাতা। তিনি মাটি দিয়ে মাত্র একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন; তার পর তাকে দোয়া করেছেন, প্রজাবন্ত ও বহুবংশে পরিণত হবার জন্য। তিনিই বলেছেন নবীদের মধ্যে যেন আমরা ভাগাভাগি বা ভেদাভেদ না করি। ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত রাখছি সকলের নজরে দেবার জন্য। কোনো এক লোকের মেষের পাল রয়েছে; শত শত মেষের মালিক তিনি।
আমি প্রশ্ন করলাম এমন এক ব্যক্তিকে, কি করে তিনি উক্ত মেষগুলো ঠিকঠাক মত চরিয়ে বেড়ান। জবাবে বললেন, তাঁর রাখাল আছে। রাখালরা মেষ চরিয়ে বেড়ায়, ঘাস খাওয়ায়, কুয়োর কাছে নিয়ে পানি পান করায়, তাই বলে মেষপাল কেবল মালিকের নিজস্ব সম্পদ। পাল থেকে একটি মেষও যদি খোয়া যায়, তবে তবুও মালিকের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
একইভাবে মানুষ খোদার সৃষ্টি এবং তার এক বিশেষ সম্পদ, যাদের আশরাফুল মাখলুকাত বলে বিশেষ সম্মান দেয়া হয়েছে, আর এই মানুষগুলোকে সত্য সুন্দরের পথে পরিচালনা করার জন্য নবি-রাসুলগণের প্রয়োজন পড়েছিল। নবি-রাসুলগণ কেবলমাত্র খোদার ন্যয় সত্য-সুন্দরের পথই দেখাতে বাধ্য, আর তাদের হেফাযত করা তাদের উপর ন্যাস্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
একটা কাঁচের জগ কঠিন পাথরের উপরে পতিত হলে শত শত টুকরো হয়ে চারদিকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পরে। যতক্ষণ ওগুলোকে ঝাড়– দিয়ে একত্রিত করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত খন্ডগুলোর কোনো সাধ্য থাকবে না, সবগুলো একত্রিত হয়ে পুনরায় পূর্বের মতো আস্ত গ্লাসে পরিণত হওয়া। তেমন ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন এক দরদি ব্যক্তির প্রয়োজন, যিনি বিনষ্ট টুকরোগুলো একত্র করে, গ্লাসের কারখানায় নিয়ে গিয়ে, জ্বালিয়ে আর একটি সুন্দর গ্লাসে রূপ দান করবে।
মানবজাতির ক্ষেত্রে তেমন দরদি ব্যক্তি হলেন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ, যিনি সম্পূর্ণ বেগুনাহ ব্যক্তি, পরম করুনাময় আলাহপাকের কালাম ও পাকরূহ, কুমারী মরিয়মের গর্ভের মাধ্যমে মানবরূপ ধারণ করলেন। আর তিনিই হলেন সম্পূর্ণ একক বেগুনাহ ব্যক্তি। বিশ্বের পাপের কাফফারা পরিশোধ দেবার জন্য তিনি স্বেচ্ছায়, নিজের পূতপবিত্র রক্ত কোরবান করলেন মর্মবিদারক সলিবে, ফলে, কেবল বিশ্বাসহেতু, বিশ্বের তাবৎ গুনাহগার মানুষ মসিহের মধ্য দিয়ে নাজাত পেল, হতে পারলো সম্পূর্ণ স্নাতশুভ্র, পূর্ণাঙ্গভাবে বেগুনাহ এক নতুন মানুষ। আর এ সকল সম্ভব হয়েছে কেবল মহান রাব্বুল ইজ্জতের কুদরতের ফলে। “যদি কেউ মসিহের সংগে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল। তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে সব নতুন হয়ে উঠেছে। এই সব আলাহ থেকেই হয়। তিনি মসিহের মধ্য দিয়ে তাঁর নিজের সংগে আমাদের মিলিত করেছেন, আর তাঁর সংগে অন্যদের মিলন করিয়ে দেবার দায়িত্ব আমাদের উপর দিয়েছেন। এর অর্থ হল, আলাহ মানুষের গুনাহ না ধরে মসিহের মধ্য দিয়ে নিজের সংগে মানুষকে মিলিত করছিলেন, আর সেই মিলনের খবর জানাবার ভার তিনি আমাদের উপর দিয়েছেন। সেজন্যই আমরা মসিহের দূত হিসাবে তাঁর হয়ে কথা বলছি। আসলে আলাহ যেন নিজেই আমাদের মধ্য দিয়ে লোকদের কাছে অনুরোধ করছেন। তাই মসিহের হয়ে আমরা এই মিনতি করছি, “তোমরা আলাহর সংগে মিলিত হও।” ঈসা মসিহের মধ্যে কোন গুনাহ ছিল না; কিন্তু আলাহ আমাদের গুনাহ তাঁর উপর তুলে দিয়ে তাঁকেই গুনারেহ জায়গায় দাঁড় করালেন, যেন মসিহের সংগে যুক্ত থাকবার দরুন আলাহর পবিত্রতা আমাদের পবিত্রতা হয়” (২ করিন্থীয় ৫ ঃ ১৭-২১)।