বিষফোড়ার জ্বালা কেবল ভুক্তভোগী প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখে। একদা আমি নিজেই তেমন জ্বালায় এতটাই অস্থির যন্ত্রনাকাতর হয়ে পড়েছিলাম, যাকেই দেখতাম তাকেই অনুনয় বিণয় করতাম, ফোড়াটি কেটে ভিতরের পুঁজ বের করে আমাকে নিষ্কৃতি দেবার জন্য। কমপক্ষে আমাকে একটানা একমাস ভুগতে হয়েছিল সেই বার।
ফোড়া হলেই তৎক্ষনাত তা কাটা সম্ভব নয়। জানতে হবে বিষফোড়াটা আসলে কি?
শরীরের মধ্যে জমে থাকা বিষ কোনো একসময় ঘণিভূত হয়ে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করে, যদি জ¦ালামুখ খুঁজে না পায় তবে গোটা শরীরে রক্তের সাথে ছুটাছুটি করতে থাকে, সাধারণ চুলকানো রোগটিও ঘটে থাকে বিষের কারণে। শরীরের মধ্যে রক্ত নির্দোষ থাকতে হবে, তবেইনা তাকে সুস্থ শরীর বলা যাবে। রক্ত দোষীত হবার অর্থ হলো জ্বালাযন্ত্রনা শুরু হওয়া। বিষফোড়া পৃথিবীর আগ্নেয়গীরির সাথে তুল্য, ভূগর্ভে গলীত লাভা নিয়ত ফাঁক খুঁজে ফিরছে স্বাধীন হবার জন্য। ভূপৃষ্টের তল ভেধ করে বের হয়ে আসে, আর ওটাকে আমরা অগ্নুৎপাত বলে জানি। আগ্নেয়গীরি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশেই তেমনটা দেখা দেয়, তবে কোনো কোনোটা মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে থাকে, আবার কোনোটি হয়ত অতন্দ্র প্রহরীর মত থাকে সজাগ সচেতন, নিয়ত করে চলে জ্বালাতন।
তা স্টীম ইঞ্জিনের কথায় আসুন, আগুনের তাপে সৃষ্ট জলীয় বাস্প অনবরত ধাক্কা মারে, তবেইতো ইঞ্জিন থাকে চলমান। মাঝে মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাষ্প জমা হয়ে পড়ে, আর তখনই তাকে একজস্ট পাইপ দিয়ে বের করে দেবার প্রয়োজন হয়। সর্বক্ষেত্রে ভিতরে সৃষ্ট হওয়া শক্তি বাহিরে বেরিয়ে আসতে চায়, যেমন ডিমের গায়ে উত্তাপ অবশ্য পরিমীত দেয়া হলে ভিতরের তরল পদার্থ একটি জীবন্ত প্রাণীর আকার ধারণ করে, কলায় কলায় বেড়ে ওঠে এবং একসময় ডিমের ক্ষুদ্র পরিসর তাকে আর ধরে রাখতে পারে না, সদ্য জন্মপ্রাপ্ত প্রাণীটি খোলস ভেধ করে, বলতে পারেন, চৌচির করে তবে মুক্তাকাশে ঘোষণা করে স্বীয় স্বাধীনতা।
ফোড়ার কথা বলছিলাম। ফোড়াটার মধ্যে গলীত পদার্থ একটি পর্যায় এসে পুঁজের আকার ধারণ করে, তখন উপরের চামড়া ভেধ করে তাকে অবমুক্ত করে দিতে হবে রোগীটিকে বাঁচানোর জন্য। শর্ত হলো উক্ত বিষাক্ত পদার্থগুলো নিষ্কিৃতি পাবার জন্য কতোটা চাপ সৃষ্টি করছে, তা পরীক্ষার জন্য সুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ফোড়া হলেই ছুরি-কাঁচি দিয়ে কেটে দিলেই রোগী সুস্থ হবে না, কাঁচা ফোড়া কেটে দিয়ে সুস্থতার পরিবর্তে অধিক বিপন্ন করাও হতে পারে। তাই তেমন ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধান হতে হবে। আমার মনে পড়ে, একটি বিবদমান দলের কথা, যারা সকলেই স্বজন-প্রিয়জন, ভাই-বোন এবং আত্মীয় স্বজন। কেবল হীনস্বার্থের কারণে তাদের মধ্যে বেঁধে গেল মারাত্মক ঝগড়া যা এতটাই মারাত্মক যে পুরো পরিবার আজ চৌচির। তাদের এমন পরষ্পর বিরোধি আক্রোশ দেখে স্তম্ভিত না হবার কারণ নেই। তা কেবল আশ্চর্য বা স্তম্ভিত কোনো সমাধান হতে পারে না। চাই অতিরিক্ত বাষ্প একজস্ট করে দেয়া, তবে পুনরায় তাদের মধ্যে মিলন ও ভ্রাতৃত্ব হতে পারবে কার্যকর।
তেমনক্ষেত্রে আমি একটু পরীক্ষা করে দেখলাম, আলাদাভাবে প্রত্যেকের সাথে আলাপ করে দেখতে চাইলাম, ফলে বুঝতে পারলাম, এটি একটি বিষফোড়া, তবে এখন পর্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ কেটে পরিষ্কার করার পর্যায়ে আসে নি। দলের সকলে যে প্রার্থনা রাখবে পুনর্মিলনের জন্য তেমন প্রয়োজন কারো মধ্যে জাগ্রত হয় নি।
পুনর্মিলনের জন্য কোনো শর্ত থাকতে পারে না, যে কোনো মুল্যে তা হতে হবে। সকলে যখন আর্থিক, সামাজিক ও পরিপাশি^কভাবে উপলব্ধি করবে পুনর্মিলনের বিষয়ে এবং ত্রাহিভাব করবে, আর্তচীৎকার করবে, খুঁজে ফিরবে তেমন একটি প্লাটফর্ম, ঠিক তখন তাদের মধ্যে নিঃশর্ত পুনর্মিলন গড়ে ওঠা সম্ভব। কথা প্রসঙ্গে আমি তাদের কাছে একটি প্রস্তাব রেখেছি, পুনর্মিলনের স্বার্থে এক সেকেন্ড পূর্বে ঘটে যাওয়া অশুভ আচরণের কথা স্বরণে আনা চলবে না। যদি বিবদমান দলগুলো তেমন পর্যায়ে উপনীত হতে পারে তবে হয়ে গেল নির্ঘাত মিলন ‘পুনর্মিলন’!
কিন্তু দেখা গেছে, আলোচনা প্রসঙ্গে সকলেই হাজার বৎসরের অভিমান অভিযোগগুলো জড়ো করে ক্ষেত্রটি এতটাই দাহ্যোম্মূখ করে তুলছে, ফলে পুনর্মিলন হয়ে পড়লো সুদূরপরাহত। আমি শর্ত দিলাম এমন তারা যদি পুনর্মিলনের প্রয়োজন বোধ করে তবে বস্তা পঁচা অভিযোগ জ¦ালিয়ে ভষ্ম করে তবে সদ্যজাত সন্তানের মতো সকলে এসে একই প্লাটফর্মে হাজির হতে হবে, আর তা বাহিরের কোনো চাপে নয়। নিজেদের প্রয়োজনের খাতিরেই তা করতে হবে। বিষবাষ্প অপসারণ করা অপরিহার্য সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও জীবন-যাপন করার জন্য।
বিশে^র মানুষগুলো যদিও একই আদমের ঔরষজাত সন্তান, স্বার্থের কারণে তারা পরষ্পর অরিন্দমে হয়ে পড়েছে পরিণত। কোনো মতবাদ কার্যকর হতে পারে না পরষ্পরের হৃদয়ে জমে থাকা অভিযোগ অপসারণ না করা পর্যন্ত। গ্লু বা সুপারগ্লু কোনোই কাজ করতে পারে না যদি জুড়ে দেয়া বস্তুগুলোর মধ্যে তৃতীয় পক্ষ অর্থাৎ ধুলি পরিষ্কার করা না হয়। ধুলি বা মরচে হলো ক্ষতিকর পদার্থ, পুনর্মিলনের পূর্বে তা অবশ্যই পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ধর্মীয় মতবাদ বিবদমান লোকদের সুপারগøুর মতো এক করে দিতে হয়েছে চালু। তারা যদি কলহ বিবাদে জড়িয়ে না পড়তো তবে তেমন মতবাদের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। শালিসি বোর্ডের কিইবা প্রয়োজন যেথা রয়েছে ভ্রাতা-ভগ্নিতে নিরঙ্কুশ অটুট প্রেম প্রীতি ভালোবাসার বন্ধন। অভাব অনটন সংসারে লেগেই আছে, তবে তা দূর করার জন্য অবশ্যই পরষ্পরের যৌথ প্রচেষ্টা থাকতে হবে। কোনো পরিবারে উপর্জনক্ষম ব্যক্তি দু’চার জনের অধিক সচরাচর দেখা যায় না। পরিবারের শিশুটি কোনো উপর্যন করে না তবে তাকে গড়ে তুলতে দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারের উপার্যনযোগ্য ব্যক্তিকে, যা হলো চিরাচরিত নিয়ম। পরিবারে প্রেম ভালোবাসা উচুনিচু সকলকে সমভাবে জড়িয়ে রাখে।
প্রেম খোদার দান, খোদা নিজেই প্রেম। যে ব্যক্তি খোদার সাথে যুক্ত তিনি সকলের সাথে থাকেন প্রেমকাতর। মানুষের কল্যাণবই অকল্যাণ তার দ্বারা ঘটতে পারে না। আর বিপরীতক্ষেত্রে প্রেমের ক্ষতিকারক মনোভাব হলো স্বার্থপরতা, কাবিল স্বার্থান্ধ হয়েই তার সহোদর ভ্রাতা হাবিলকে হত্যা করে ছিল, যা হলো মানবজাতির প্রথম রক্তপাত। তারপর প্রতিনিয়ত মানুষের হাতে মানুষ হত হয়ে আসছে নানা কারণে, এমনকি ধর্মীয় কারণেও অগণিত হত্যাযজ্ঞ চলে আসছে সাগরের ঢেউয়ের মতো, যা মানুষের দ্বারা বন্ধ হবার নয়। তা মানুষ শত শত মিলন খেলায় মেতে আছে তখন থেকে। একপক্ষ আর এক পক্ষকে দোষারোপ করে আসছে, প্রহসনমূলক স্থানীয় তথা আন্তর্জাতিক মানের শালিসি আদালত বসতে দেখেছি, বিষফোড়ার বিষ আর বেরও হচ্ছে না, যন্ত্রণাকাতর রোগীটিও আর সুস্থ হচ্ছে না, কেবল আর্তপীড়িত দুঃস্থের আর্তচিৎকারে আকাশ বিদীর্ণ।
হায়রে মানুষ, কেউ কাওকে পাত্তাই দিচ্ছে না। নিজেদের অবস্থান পোক্ত হতে পারে না যদি আশপাশের সাপোর্ট লুজ হয়ে পড়ে। জলের বিন্দু কেবল ক্ষণকালের প্রাণ, যেমন নিশির শিশির, রোদের প্রথম ছোঁয়ায় তা উবে যেতে বাধ্য। কিন্তু বরফগলা জলফোটাগুলো যখন পরষ্পরকে আকড়ে ধরে নির্বিবাদে, তেমন জলের নাম রাখা হয় নায়াগ্রা ও ভিক্টোরিয়া।
আসুন, মানব সমাজে উপ্ত বিষের উৎস খুঁজে ফিরি। পাপ হলো প্রধান বিষ, যার প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো খোদার প্রতি সন্দেহ আর সন্দেহের কুফল হলো দ্রোহ। প্রথম মানুষ আদম হলেন খোদাদ্রোহী। আমরা খোদাদ্রোহী তা অবশ্যই জন্মসুত্রে। পাপের নিগড়ে আজ আমরা বন্দি। নিরুপায়! মজার বিষয় হলো, গর্ত খোড়ার সময় খোড়া মাটি রাখার জন্য গর্তটি যদি বড় করা হয়, তবে সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না। তাবৎ গুনাহগার মানুষ একজনের কাছ থেকে আর একজন এমন কি প্রত্যাশা করতে পারে? প্রকৃত সমাধান কেবল প্রেমিক খোদা, যিনি নিজের সুরতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আত্মবৎ প্রেম করেন গোটা বিশ্ববাসিকে, কেবল তাঁর কাছ থেকেই আসতে হবে নিরঙ্কুষ মিলন ভ্রাতৃত্ব; মানুষের সাথে মানুষের পুনর্মিলন এবং খোদার সাথে মানুষের চিরস্থায়ী মিলন সম্ভব হয়েছে এক চুড়ান্ত মূল্যে। খোদা নিজেই তেমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন গোটা বিশ^মানবের জন্য। মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ হয়েছে খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহের পূতপবিত্র রক্তের মূল্যে।
গোটা বিশ্ববাসি আজ মসিহের রক্তের মূল্যে হতে পেরেছে ‘মুক্তপাপ’। খোদা মানুষকে দিয়েছেন অনন্ত জীবন আর এ জীবন নির্ভর করছে খোদাবন্দ ঈসা মসিহের সাথে মিলনের ফলে। মানুষের পাপের দাসত্ব ও শৃঙ্খল মুক্ত কেবল মসিহের পূতপবিত্র রক্তের মূল্যে হয়েছে শোধ। সকল বিষ তিনি শোধ দিলেন। মসিহের মধ্যে অবস্থানরত সকলে উপভোগ করতে পারে অমলিন প্রেম সহমর্মিতা।
স্নাতশুভ্র ব্যক্তিগণই স্নাত ব্যক্তির কাতারে হতে পারে সামিল।
“তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব” (মথি ১১ ঃ ২৮)