বর্তমান বিশ্বে কত হাজার ভাষা যে রয়েছে প্রচলিত তা কেবল অনুমান ভিত্তিক শুমারী করা হয়। প্রকৃতার্থে মূল খবর কেউ জানে না। যেমন বাংলা ভাষা, বাংলাদেশের মধ্যেই দেখুন, ছোট্ট একটা দেশ, আনুমানিক সতোরো কোটি লোকের বাস রয়েছে এ দেশে। সকলেই বাংলায় কথা বলে, কথ্য ভাষা আর লিখিত ভাষার মধ্যে যতোটা মিল খুঁজে পাবেন, কথ্য ভাষায় রয়েছে বেজায় গড়মিল। সিলেট এলাকায় লোকজন কথা বলছে বাংলা ভাষায় আর বরিশাল এলাকায় লোকজনও ঐ একই ভাংলা ভাষা ব্যবহার করে। কিন্তু দুজন দুজনকে বুঝতে পারে না। এ গেলো ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত। আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন এমন বৈশম্য খুঁজতে গিয়ে। আবার ঐক্যের দিক দিয়ে যদি গবেষণা করেন তবে তেমনক্ষেত্রে উত্তরোত্তর সাফল্য আসবে আপনার গবেষণাকর্মে। তাই গোটা বিশ্ব মানুষে রয়েছে ভরা, যে ইচ্ছাটা খোদা নিজেই পোষণ করেন এবং তা প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.)কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ নির্দেশ পালনের জন্য তিনি তাকে প্রচুর ক্ষমতাও দিয়েছিলেন। শরীরে যদি তেমন ক্ষমতা না থাকে, তবে তো চাইলেও কিছু করে দেখানো সম্ভব নয়।
যেমন মানুষের ব্যবহৃত ভাষা রয়েছে অগণিত, তদ্রুপ ধর্মও খুঁজে পাবেন গণনার উর্ধ্বে। আবার বাহ্যত একই ধর্মানুসারী মতবাদের প্রশ্নে অন্তঃবিভাগ রয়েছে এতটাই কঠিনাকারে, কখনো কখনো মরণঘাতি আঘাত দিয়ে শেষ করে দিতে চায় একে অপরকে। কারো সাথে কারো জলচল স্থাপন করা সম্ভব হয়ে আর ওঠে না। তারপরও আমরা জোরালো দাবি তুলবো, আমরা সকলে মানুষ, সবার উপরে মানুষ সত্য। মানুষের সেবা দানই হলো খোদার সেবা। ধর্মীয় ক্ষেত্র বলুন বা রাজনৈতিক মতাদর্শ বলুন, আপনি যে কোন প্লাটফর্মে অবস্থান করুন না কেন, আমি দেখতে চাই আপনার অন্তরের অবস্থা। কোন ধরণের মন-মানসিকতা নিয়ে আপনি সমাজে করছেন বিচরণ। একটি সুখি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধশালী পরিবার ও সমাজ গড়ার মানসিকতা না সুন্দর সবকিছু লন্ডভন্ড ছারখার করার হীনমন্যতায় আপনি ভুগে চলছেন!
পরমকরুনাময় খোদার আত্মা হলো শৃঙ্খলার আত্মা, তিনি সৈন্দর্য পিপাসু। তার সৃষ্টির দিকে তাকালে হৃদয় মন ভরে ওঠে তৃপ্তিতে। মসিহ তাই সে কথাই ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর আগমনে বিবদমান বিশৃঙ্খল সমাজ পুনরায় মিলন ভ্রাতৃত্তে গড়ে ওঠে, তাপিত হৃদয়ে শান্তি ও পরিতৃপ্তি জাগে। আর বিপরীত দিক দিয়ে দেখতে পাই কুলাঙ্গার ইবলিসের মনোভাব, সবকিছু ছারখার করে দেয়া ওর একমাত্র ব্রত।
তাই প্রত্যেকটি মানুষ নিজেকে নিজেই পরীক্ষা করে দেখুক, সে প্রকৃতার্থে কোন আত্মার দ্বারা নিয়ত হচ্ছে পরিচালিত। কে কোন ধর্মাবলম্বী তা যতোটা গুরুত্ববহ তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ: কে কোন মন-মানসিকতার অধিকারি। কার হৃদয়ে রয়েছে কোন আত্মার প্রভাব। ব্যক্তি যদি ইবলিসকে সুযোগ দেয় তাকে পরিচালনা করার জন্য তবে সে নিশ্চয়ই ব্যতিব্যস্ত থাকবে অন্যের ক্ষতি করার জন, আর সে যদি খোদার আত্মা অর্থাৎ খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহের পরিচালনায় হয়ে থাকে পরিচালিত তবে উক্ত ব্যক্তি গোটা বিশ্ববাসির কল্যাণে শততঃ থাকবেন নিবেদিত প্রাণ। ব্যক্তির বাহ্যিক পরিচয় আর তার মানসিকতা, এ দুটো দিক হলো তার জন্য বিবেচ্য বিষয়। যেমন পোশাক পরিচ্ছদ দিয়ে কোনো ব্যক্তির ধর্মমত বা মতাদর্শ নির্ণয় করা আদৌ সম্ভব নয়। এমনকি শারীরিক গঠনপ্রণালী দিয়েও ব্যক্তির মনের প্রকৃত অবস্থা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হতে পারে না।
জন্মসূত্রে প্রত্যেকটা মানুষ গুনাহগার, অন্ধকার বিশ্বের একজন সদস্য। ধর্ম বা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম নিয়ে কেউ জন্মায় না, কেবল মানুষ হয়েই হয় মানুষের জন্ম। একটি বাঁশ, বাঁশ হিসেবেই জন্ম নেয়। উক্ত বাঁশটি যখন বৃদ্ধি পায়, পোক্ত হয় তখন বাগানের মালিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ওটি দিয়ে সে কি কাজ করবে। বাঁশ দিয়ে ঘরের খুটি হতে পারে। আবার বাঁশের ডালা-চালুন তৈরি হয়, তছাড়া আমি যে কাগজের উপর লিখে চলছি সেই কাগজ যদি বাঁশের হয়ে থাকে তবে তো উত্তম।
মানুষ সন্ত্রাসী হিসেবে জন্ম গ্রহণ করে না অথবা সাধুসন্ত হয়েও পৃথিবীতে আগমন করে না। মানুষ হলো খোদার প্রতিনিধি, যাকে খোদা নিজেই স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। ঐশি জ্ঞান ও পাকরূহ নিয়ে মানুষ আসলে বেঁচে থাকে। মহাজ্ঞানি খোদা প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.)কে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করলে, যাকে বলে মাটির মূর্তি। নির্মাণকালে তাঁর মধ্যে কোনো প্রাণ ছিল না, যখনই খোদা তাঁর মধ্যে প্রাণবায়ু ফুঁকে দিলেন, অমনি প্রজ্ঞাময় আদম হলেন খোদার প্রতিনিধি। সকল মানুষ বেঁচে আছে খোদার প্রাণবায়ুর উপস্থিতিতে।
মানুষ সর্বদাই থাকে মানুষ হিসেবে গণ্য। এবার দেখব, উক্ত মানুষটি কলায় কলায় বৃদ্ধি লাভ করে জীবন পথে চলার জন্য কোন ধরণের শিক্ষালাভ করলো, কোন মতবাদে সে দীক্ষালাভ করলো, যা হবে তার মানসিকতা যাচাই করার উপায়। ব্যক্তি যদি মন্দ আত্মার দ্বারা হয় পরিচালিত তবে তাকে দিয়ে ভয়ের কারণ আছে। আবার ব্যক্তি যদি খোদার পাকরূহ দ্বারা হয় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত তবে সমাজে যথেষ্ট কল্যাণমূলক অবদান পাওয়া যাবে তার দ্বারা। প্রবাদ বাক্য রয়েছে প্রচলিত; ‘ঢেকি স্বর্গে গেলেও বাড়ই বাধে’ তার অর্থ হলো অবস্থান পরিবর্তনের ফলে অন্তস্থলের পরিবর্তন ঘটে না, আর হৃদয়ের পরিবর্তন মানুষের হাতে থাকে না। মানুষকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা ও অধিকার একমাত্র মানুষের নির্মাতা খোদ খোদার হাতেই রয়েছে ন্যায়। খোদা মানুষের আমূল পরিবর্তনের জন্য এক চমৎকার ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন যা আপনাকে আমাকে খুঁজে নিতে হবে, অথবা পরিবর্তনের জন্য ঐকান্তিকতা আমাদের অন্তরে রাখতে হবে। পূতপবিত্র খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি প্রত্যেকের হৃদয়দ্বারে দাঁড়িয়ে নিয়ত করাঘাত করে চলছেন, যদি কেউ সাড়া দেয়, খুলে দেয় নিজ হৃদয় দূয়ার, আর তাঁকে শ্রদ্ধাবনত ও সাদরে হৃদয়ে বসার অধকার দেয়, তবে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে এক নতুন সৃষ্টি হিসেবে গড়ে তুলেন, তখন দুনিয়ার কোনো অপশক্তি তাকে আর মসিহের হাত থেকে ছিনিয়ে নেবার ক্ষমতা রাখে না (প্রকাশিত কালাম ৩ ঃ ২০, ২করিন্থীয় ৫ ঃ ১৭-২১)।
এবার বিবেচনা করে দেখি, মানুষের মধ্যে এতটা বৈপরিত্তের কারণটা তাহলে কি হতে পারে? একটি কাঁচের পাত্র যদি পাথরের উপর পড়ে যায়, তবে ওটা যে কতোটা খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়বে তা পতনের পূর্বে কারো পক্ষে নির্ণয় করা আদৌ সম্ভব নয়। কিন্তু পতনের পূর্বে ওটা যে মাত্র একটি পাত্র তা সকলেই জানে।
মানবজাতির ক্ষেত্রে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল। অভিশপ্ত ইবলিস মানুষকে প্রলুব্ধ করলো তাদের মধ্যে দ্রোহ সৃষ্টি করলো, লোভাতুর করে ছাড়লো, কথায় বলে, লোভে পাপ আর পাপে ঘটে মৃত্যু। ইবলিসের কুটচাল তারা আদৌ বুঝতে পারলেন না, প্রলোভনে নিষিদ্ধ কাজ করার জন্য রাজী হয়ে গেলেন। মানুষ হলো বিতাড়িত, পতিত, তাদের ঠেলে দেয়া হলো নির্বাসনে। পাপে হলো মানুষের পতন! উক্ত পাপ ও দ্রোহ আজ প্রত্যেকের ধমনিতে নিয়ত বয়ে চলছে, যদিও তারা নিজেদের জ্ঞান অনুযায়ী নিজেদের পথ মত আবিষ্কার করে নিজেদের বাঁচাবার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে চলছে, তবুও উক্ত ব্যবস্থাগুলো তাদের সুরক্ষা দেবার জন্য যথেষ্ট নয়, প্রভু আক্ষেপ করেন, … আমার বান্দারা দু’টা গুনাহ করেছে। জীবনদায়ী পানির ঝর্ণা যে আমি, সেই আমাকেই তারা ত্যাগ করেছে, আর নিজেদের জন্য এমন পানি রাখবার জায়গা তৈরি করেছে যা ভাঙ্গা যাতে পানি ধরে রাখা যায় না (নবীদের কাছে নাজিলকৃত হুকুম ইয়ারমিয়া ২ ঃ ১৩)। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভালোমন্দ দুটিই থাকে। কিন্তু মাবুদ দয়াপরবশ হয়ে নিজেই এক বিশেষ ব্যবস্থা প্রেরণ করেছেন, মানুষের সাবেক মর্যাদা ফিরিয়ে দেবার জন্য ও তাদের মধ্যে এক চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
পতনের পরবর্তী প্রচেষ্টা একটিই থাকে, আর তা হলো উদ্ধার! সকলেই পেতে চান নাজাত বা পরিত্রাণ, আর সে কারণে নিজেরা নিজেদের মত করে পথ সৃষ্টি করার তালে থাকে ব্যস্ত। ফলে দেখা গেল, ‘যত মত তত পথ’ গোটা বিশ্ব পথে পথে ছেয়ে গেল, কেউই ঐশি পথে চলতে আর আনন্দ ও স্বস্তি পাচ্ছে না। তারা আজ নিজেরা নিজেদের ঐকমত্যে এক প্লাটফর্মে ওঠে আসতে পারছে না। হৃদয়ের মধ্যে রোপিত পাপ ও উগ্রতার কারণে খোদার সুনির্দিষ্ট পথে সমর্পীত হতে রাজি হচ্ছে না। রয়েছে তাদের মনে কঠিন অহমিকা। আর এগুলো হলো পাপের উপজাত। তবে মজার বিষয় হলো, তাদের স্বকল্পিত মুক্তির ব্যবস্থা তাদের বর্তুলাকারে নিয়ত ঘুরিয়ে মারছে, যেমন কুলুর বলদ, চোখ বেধে বাধ্য করা হয়, নিত্যদিন ঘাণির চারদিকে বলয় নিয়ে ঘুরে মরতে। কিন্তু মানুষ তো হলো সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, খোদার প্রতিনিধি,তার পরিণতি এমন করুণ হবে তা ভাবনারও অতীত। বাস্তবে তেমনটাই ঘটেছে ও নিয়ত ঘটছে। পাতকুয়ায় পড়ে যাওয়া অসহায় শিশুটিকে তুলতে ঠিকই পেরেছে, তবে জীবিত অবস্থায় নয়, মৃত অবস্থায়। বিপন্ন মানুষের জন্য হেদায়েত বাণী শুনতে বেশ ভালোই লাগে। দেশি-বিদেশি মিশ্রিত ভাষায় সুর করে যখন বয়ান করে, কেউ বুঝুক আর না বুঝুক, সকলেই চুকচুক করতে থাকে, আর মাঝেমধ্যে দু’চারটে স্লোক আউড়িয়ে চলে। যে ব্যক্তি মারা গেছে তাকে যদি কিছু করতে বলা হয় তবে বিষয়টি কতোটা হাস্যকর হতে পারে, একটু ভেবে দেখবেন কি? মানুষ তো প্রথম নর-নারী আদম হাওয়ার পতনের সাথে সাথে হয়ে গেল পতীত। এখন যদি তাদের বলা হয়, নিজেদের প্রচেষ্টায় সেখানে ফিরে যেতে, যে স্থান থেকে হয়েছে পতীত, তেমন নাজাতের বাণী, মানুষকে মিথ্যা স্বান্তনা দেয়া ছাড়া আর কি হতে পারে? ধর্মের মতবাদে কোনো ভুল দেখি না, তবে মৃত ব্যক্তিকে যদি বলা হয়, সে ঐ সকল নিয়মাচার নিয়মিতভাবে পালন করুক নিজে যেন জীবিত হয়ে ওঠে, তবে তা অবশ্যই ফালতু দৃশ্য হবে। কিন্তু ঐশি ক্ষমতাবলে যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে ডাক দেয়, যেমন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ মৃত লাসারকে ডাক দিয়ে তাকে জীবিত করলেন, তেমন কাজটি হবে সত্যিকার ও বাস্তবে মৃতের জন্য জীবন্ত প্রদান করা। অবশ্য তেমন কুদরতি কাজ কেবল তারই পক্ষে সাধনকরা সম্ভব যিনি হলেন বাতেনি আলাহপাকের হুবহু জাহেরি প্রকাশ, খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ, কেননা তিনি হলেন পরমকরুনাময় আল্লাহপাকের জীবন্ত কর্মক্ষম কালাম ও পাকরূহ, যিনি কুমারী মরিয়ম নাম্নি এক বিদুষী সতিসাদ্ধি নারীর গর্ভের মাধ্যমে মানবরূপে জগতে নেমে এলেন। তিনি হলেন পতীত বিশ্বের জন্য রহমতের এক বিশেষ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে গুনাহগার আদম জাতিকে পুনুরুদ্ধার করতে পারেন। মসিহ এক চূড়ান্ত মূল্য দিলেন নিজের পূতপবিত্র রক্তের মূল্যে, বিশ্বের পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ দিতে। তিনি দুনিয়াতে এসেছেন হারানো মানিক খুঁজে নেবার জন্য। কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব এ অসাদ্ধ সাধন করা। কেননা তিনি হলেন সম্পূর্ণ এক বেগুনাহ ব্যক্তি যাকে মাবুদ মানবজাতিকে নাজাত দেবার সার্বিক ক্ষমতা ও অধিকার প্রদান করেছেন। আর এ ব্যবস্থার ঘোষণা বহুপূর্বে, অর্থাৎ আদমের পতনের সময় তিনি উচ্চারণ করেছেন। কিতাবুল মুকাদ্দস পয়দায়েশ নামক ছহিফায় ৩ ঃ ১৫ দেখলে বিষয়টি পাঠকের কাছে হবে পরিষ্কার।
মানুষের সাথে মানুষের অমিল দলাদলি ঠিক তখনই হবে দূরিভুত যখন তাদের শরীর থেকে কালবিষ অর্থাৎ পাপ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব হবে। খোদার সাথে আপনি তখনই মিলিতে পারবেন, যখন আপনি হতে পারবেন সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। কেননা গুনাহের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠতে পারে না। যেমন আলো আর অন্ধকারের সাথে কষ্মিন কালেও মিলন করিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। নবী-রাসুলগণ ধার্মিকতার পয়গাম বহন করেছেন বটে, তবে তাদের প্রত্যেকের জন্ম হয়েছে পতীত আদমের বীর্যে, গত্যন্তর নেই! আর শরীয়ত বলতে আমরা দশটি শরীয়ত বুঝি, তা যেন রক্ত পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত ব্যবস্থা মাত্র। উক্ত শরীয়ত সঠিকভাবে বলে দিতে পারে, কি করলে পাপ হয় আর কিভাবে হয়েছে মানুষ পতীত। কিন্তু শরীয়তের কোনো ক্ষমতা নেই পতীত ব্যক্তিকে উদ্ধার করার জন্য। তখন অবশ্যই প্রয়োজন খোদার বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োগ। খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ হলেন পাপীর বন্ধু, যেমন চিকিৎসক হলেন রোগীর বন্ধু।
মসিহ নিজের রক্তের মূল্যে আমাদের জন্য ক্রয় করে এনেছেন অভাবিত নাজাত, যা লাভ করার জন্য বিশ্বের তাবৎ বক্তিবর্গ একটা না একটা পদ্ধতি অবলম্বন করে চলছে। বিভ্রান্ত মানুষ কত কি যে করে চলছে তার ইয়াত্তা নেই। দিক-বিদিক ছুটে চলছে নাজাত পাবার জন্য। আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি, কাছিমের পিঠের উপর শেওলা তুলে খেতে, উদ্দেশ্য হলো পরিত্রাণ লাভ। দেশ-বিদেশ চষে বেড়াচ্ছে নাজাত আবিষ্কারের নিমিত্তে। মানুষ পর্যন্ত বলি দিচ্ছে নাজাত লাভের লোভে। ফলে নিজেরাও মরছে অন্যকেও মারছে। আর এর পিছনে যে অনুপ্রেরণা কাজ করছে তা কেবল খোদার কালামের অপব্যাখ্যা মাত্র। খোদা যে মহব্বত, সে খবর কতজন জানে ও মানে। সেই মানুষকে ঘৃণা করবেন, কচুকাটা করবেন, তারপরও আপনাদের প্রত্যাশা, খোদার রেজামন্দি! আকাশ-কুষুম কল্পনা ছাড়া এ ভাবনা আর কি হতে পারে? গোটা বিশ্ব ফেঁসে আছে চাটুকার ইবলিসের কুটচালে। প্রকৃত সত্য থেকে সকলেই হয়ে আছে দূরীকৃত। মানুষের ধার্মিকতা কেবল প্রত্যাখ্যাত ছেড়া ন্যাকড়াতুল্য মনে হবে যদি তা খোদার ধার্মিকতার সাথে তুলনা করা হয়। খোদা কিন্তু আমাদের পেতে চান, দিতে চান তাঁর ক্রোড়ে অনন্ত ঠাই। সেজন্যই আমাদের স্নাতশুভ্র কাফফারা মুক্ত করার জন্য মসিহকে প্রাণ দিতে হলো। কেবল প্রেমের তাগিদে তারই কাছে তিনি বারবার আমাদের ফিরিয়ে নিতে চান।
মসিহ হলেন সেই যোগ্য ব্যবস্থা যার উপর বিশ্বাস করার ফলে হতে পেরেছি এক নতুন সৃষ্টি, তিনি আমাদের সকল অপরাধির মাসুল স্বীয় পূতপবিত্র রক্তের মূল্যে শোধ দেবার ফলেই আজ আমরা বেঁচে আছি।
যেমন মানুষের ব্যবহৃত ভাষা রয়েছে অগণিত, তদ্রুপ ধর্মও খুঁজে পাবেন গণনার উর্ধ্বে। আবার বাহ্যত একই ধর্মানুসারী মতবাদের প্রশ্নে অন্তঃবিভাগ রয়েছে এতটাই কঠিনাকারে, কখনো কখনো মরণঘাতি আঘাত দিয়ে শেষ করে দিতে চায় একে অপরকে। কারো সাথে কারো জলচল স্থাপন করা সম্ভব হয়ে আর ওঠে না। তারপরও আমরা জোরালো দাবি তুলবো, আমরা সকলে মানুষ, সবার উপরে মানুষ সত্য। মানুষের সেবা দানই হলো খোদার সেবা। ধর্মীয় ক্ষেত্র বলুন বা রাজনৈতিক মতাদর্শ বলুন, আপনি যে কোন প্লাটফর্মে অবস্থান করুন না কেন, আমি দেখতে চাই আপনার অন্তরের অবস্থা। কোন ধরণের মন-মানসিকতা নিয়ে আপনি সমাজে করছেন বিচরণ। একটি সুখি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধশালী পরিবার ও সমাজ গড়ার মানসিকতা না সুন্দর সবকিছু লন্ডভন্ড ছারখার করার হীনমন্যতায় আপনি ভুগে চলছেন!
পরমকরুনাময় খোদার আত্মা হলো শৃঙ্খলার আত্মা, তিনি সৈন্দর্য পিপাসু। তার সৃষ্টির দিকে তাকালে হৃদয় মন ভরে ওঠে তৃপ্তিতে। মসিহ তাই সে কথাই ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর আগমনে বিবদমান বিশৃঙ্খল সমাজ পুনরায় মিলন ভ্রাতৃত্তে গড়ে ওঠে, তাপিত হৃদয়ে শান্তি ও পরিতৃপ্তি জাগে। আর বিপরীত দিক দিয়ে দেখতে পাই কুলাঙ্গার ইবলিসের মনোভাব, সবকিছু ছারখার করে দেয়া ওর একমাত্র ব্রত।
তাই প্রত্যেকটি মানুষ নিজেকে নিজেই পরীক্ষা করে দেখুক, সে প্রকৃতার্থে কোন আত্মার দ্বারা নিয়ত হচ্ছে পরিচালিত। কে কোন ধর্মাবলম্বী তা যতোটা গুরুত্ববহ তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ: কে কোন মন-মানসিকতার অধিকারি। কার হৃদয়ে রয়েছে কোন আত্মার প্রভাব। ব্যক্তি যদি ইবলিসকে সুযোগ দেয় তাকে পরিচালনা করার জন্য তবে সে নিশ্চয়ই ব্যতিব্যস্ত থাকবে অন্যের ক্ষতি করার জন, আর সে যদি খোদার আত্মা অর্থাৎ খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহের পরিচালনায় হয়ে থাকে পরিচালিত তবে উক্ত ব্যক্তি গোটা বিশ্ববাসির কল্যাণে শততঃ থাকবেন নিবেদিত প্রাণ। ব্যক্তির বাহ্যিক পরিচয় আর তার মানসিকতা, এ দুটো দিক হলো তার জন্য বিবেচ্য বিষয়। যেমন পোশাক পরিচ্ছদ দিয়ে কোনো ব্যক্তির ধর্মমত বা মতাদর্শ নির্ণয় করা আদৌ সম্ভব নয়। এমনকি শারীরিক গঠনপ্রণালী দিয়েও ব্যক্তির মনের প্রকৃত অবস্থা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হতে পারে না।
জন্মসূত্রে প্রত্যেকটা মানুষ গুনাহগার, অন্ধকার বিশ্বের একজন সদস্য। ধর্ম বা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম নিয়ে কেউ জন্মায় না, কেবল মানুষ হয়েই হয় মানুষের জন্ম। একটি বাঁশ, বাঁশ হিসেবেই জন্ম নেয়। উক্ত বাঁশটি যখন বৃদ্ধি পায়, পোক্ত হয় তখন বাগানের মালিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ওটি দিয়ে সে কি কাজ করবে। বাঁশ দিয়ে ঘরের খুটি হতে পারে। আবার বাঁশের ডালা-চালুন তৈরি হয়, তছাড়া আমি যে কাগজের উপর লিখে চলছি সেই কাগজ যদি বাঁশের হয়ে থাকে তবে তো উত্তম।
মানুষ সন্ত্রাসী হিসেবে জন্ম গ্রহণ করে না অথবা সাধুসন্ত হয়েও পৃথিবীতে আগমন করে না। মানুষ হলো খোদার প্রতিনিধি, যাকে খোদা নিজেই স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। ঐশি জ্ঞান ও পাকরূহ নিয়ে মানুষ আসলে বেঁচে থাকে। মহাজ্ঞানি খোদা প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.)কে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করলে, যাকে বলে মাটির মূর্তি। নির্মাণকালে তাঁর মধ্যে কোনো প্রাণ ছিল না, যখনই খোদা তাঁর মধ্যে প্রাণবায়ু ফুঁকে দিলেন, অমনি প্রজ্ঞাময় আদম হলেন খোদার প্রতিনিধি। সকল মানুষ বেঁচে আছে খোদার প্রাণবায়ুর উপস্থিতিতে।
মানুষ সর্বদাই থাকে মানুষ হিসেবে গণ্য। এবার দেখব, উক্ত মানুষটি কলায় কলায় বৃদ্ধি লাভ করে জীবন পথে চলার জন্য কোন ধরণের শিক্ষালাভ করলো, কোন মতবাদে সে দীক্ষালাভ করলো, যা হবে তার মানসিকতা যাচাই করার উপায়। ব্যক্তি যদি মন্দ আত্মার দ্বারা হয় পরিচালিত তবে তাকে দিয়ে ভয়ের কারণ আছে। আবার ব্যক্তি যদি খোদার পাকরূহ দ্বারা হয় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত তবে সমাজে যথেষ্ট কল্যাণমূলক অবদান পাওয়া যাবে তার দ্বারা। প্রবাদ বাক্য রয়েছে প্রচলিত; ‘ঢেকি স্বর্গে গেলেও বাড়ই বাধে’ তার অর্থ হলো অবস্থান পরিবর্তনের ফলে অন্তস্থলের পরিবর্তন ঘটে না, আর হৃদয়ের পরিবর্তন মানুষের হাতে থাকে না। মানুষকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা ও অধিকার একমাত্র মানুষের নির্মাতা খোদ খোদার হাতেই রয়েছে ন্যায়। খোদা মানুষের আমূল পরিবর্তনের জন্য এক চমৎকার ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন যা আপনাকে আমাকে খুঁজে নিতে হবে, অথবা পরিবর্তনের জন্য ঐকান্তিকতা আমাদের অন্তরে রাখতে হবে। পূতপবিত্র খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি প্রত্যেকের হৃদয়দ্বারে দাঁড়িয়ে নিয়ত করাঘাত করে চলছেন, যদি কেউ সাড়া দেয়, খুলে দেয় নিজ হৃদয় দূয়ার, আর তাঁকে শ্রদ্ধাবনত ও সাদরে হৃদয়ে বসার অধকার দেয়, তবে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে এক নতুন সৃষ্টি হিসেবে গড়ে তুলেন, তখন দুনিয়ার কোনো অপশক্তি তাকে আর মসিহের হাত থেকে ছিনিয়ে নেবার ক্ষমতা রাখে না (প্রকাশিত কালাম ৩ ঃ ২০, ২করিন্থীয় ৫ ঃ ১৭-২১)।
এবার বিবেচনা করে দেখি, মানুষের মধ্যে এতটা বৈপরিত্তের কারণটা তাহলে কি হতে পারে? একটি কাঁচের পাত্র যদি পাথরের উপর পড়ে যায়, তবে ওটা যে কতোটা খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়বে তা পতনের পূর্বে কারো পক্ষে নির্ণয় করা আদৌ সম্ভব নয়। কিন্তু পতনের পূর্বে ওটা যে মাত্র একটি পাত্র তা সকলেই জানে।
মানবজাতির ক্ষেত্রে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল। অভিশপ্ত ইবলিস মানুষকে প্রলুব্ধ করলো তাদের মধ্যে দ্রোহ সৃষ্টি করলো, লোভাতুর করে ছাড়লো, কথায় বলে, লোভে পাপ আর পাপে ঘটে মৃত্যু। ইবলিসের কুটচাল তারা আদৌ বুঝতে পারলেন না, প্রলোভনে নিষিদ্ধ কাজ করার জন্য রাজী হয়ে গেলেন। মানুষ হলো বিতাড়িত, পতিত, তাদের ঠেলে দেয়া হলো নির্বাসনে। পাপে হলো মানুষের পতন! উক্ত পাপ ও দ্রোহ আজ প্রত্যেকের ধমনিতে নিয়ত বয়ে চলছে, যদিও তারা নিজেদের জ্ঞান অনুযায়ী নিজেদের পথ মত আবিষ্কার করে নিজেদের বাঁচাবার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে চলছে, তবুও উক্ত ব্যবস্থাগুলো তাদের সুরক্ষা দেবার জন্য যথেষ্ট নয়, প্রভু আক্ষেপ করেন, … আমার বান্দারা দু’টা গুনাহ করেছে। জীবনদায়ী পানির ঝর্ণা যে আমি, সেই আমাকেই তারা ত্যাগ করেছে, আর নিজেদের জন্য এমন পানি রাখবার জায়গা তৈরি করেছে যা ভাঙ্গা যাতে পানি ধরে রাখা যায় না (নবীদের কাছে নাজিলকৃত হুকুম ইয়ারমিয়া ২ ঃ ১৩)। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভালোমন্দ দুটিই থাকে। কিন্তু মাবুদ দয়াপরবশ হয়ে নিজেই এক বিশেষ ব্যবস্থা প্রেরণ করেছেন, মানুষের সাবেক মর্যাদা ফিরিয়ে দেবার জন্য ও তাদের মধ্যে এক চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
পতনের পরবর্তী প্রচেষ্টা একটিই থাকে, আর তা হলো উদ্ধার! সকলেই পেতে চান নাজাত বা পরিত্রাণ, আর সে কারণে নিজেরা নিজেদের মত করে পথ সৃষ্টি করার তালে থাকে ব্যস্ত। ফলে দেখা গেল, ‘যত মত তত পথ’ গোটা বিশ্ব পথে পথে ছেয়ে গেল, কেউই ঐশি পথে চলতে আর আনন্দ ও স্বস্তি পাচ্ছে না। তারা আজ নিজেরা নিজেদের ঐকমত্যে এক প্লাটফর্মে ওঠে আসতে পারছে না। হৃদয়ের মধ্যে রোপিত পাপ ও উগ্রতার কারণে খোদার সুনির্দিষ্ট পথে সমর্পীত হতে রাজি হচ্ছে না। রয়েছে তাদের মনে কঠিন অহমিকা। আর এগুলো হলো পাপের উপজাত। তবে মজার বিষয় হলো, তাদের স্বকল্পিত মুক্তির ব্যবস্থা তাদের বর্তুলাকারে নিয়ত ঘুরিয়ে মারছে, যেমন কুলুর বলদ, চোখ বেধে বাধ্য করা হয়, নিত্যদিন ঘাণির চারদিকে বলয় নিয়ে ঘুরে মরতে। কিন্তু মানুষ তো হলো সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, খোদার প্রতিনিধি,তার পরিণতি এমন করুণ হবে তা ভাবনারও অতীত। বাস্তবে তেমনটাই ঘটেছে ও নিয়ত ঘটছে। পাতকুয়ায় পড়ে যাওয়া অসহায় শিশুটিকে তুলতে ঠিকই পেরেছে, তবে জীবিত অবস্থায় নয়, মৃত অবস্থায়। বিপন্ন মানুষের জন্য হেদায়েত বাণী শুনতে বেশ ভালোই লাগে। দেশি-বিদেশি মিশ্রিত ভাষায় সুর করে যখন বয়ান করে, কেউ বুঝুক আর না বুঝুক, সকলেই চুকচুক করতে থাকে, আর মাঝেমধ্যে দু’চারটে স্লোক আউড়িয়ে চলে। যে ব্যক্তি মারা গেছে তাকে যদি কিছু করতে বলা হয় তবে বিষয়টি কতোটা হাস্যকর হতে পারে, একটু ভেবে দেখবেন কি? মানুষ তো প্রথম নর-নারী আদম হাওয়ার পতনের সাথে সাথে হয়ে গেল পতীত। এখন যদি তাদের বলা হয়, নিজেদের প্রচেষ্টায় সেখানে ফিরে যেতে, যে স্থান থেকে হয়েছে পতীত, তেমন নাজাতের বাণী, মানুষকে মিথ্যা স্বান্তনা দেয়া ছাড়া আর কি হতে পারে? ধর্মের মতবাদে কোনো ভুল দেখি না, তবে মৃত ব্যক্তিকে যদি বলা হয়, সে ঐ সকল নিয়মাচার নিয়মিতভাবে পালন করুক নিজে যেন জীবিত হয়ে ওঠে, তবে তা অবশ্যই ফালতু দৃশ্য হবে। কিন্তু ঐশি ক্ষমতাবলে যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে ডাক দেয়, যেমন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ মৃত লাসারকে ডাক দিয়ে তাকে জীবিত করলেন, তেমন কাজটি হবে সত্যিকার ও বাস্তবে মৃতের জন্য জীবন্ত প্রদান করা। অবশ্য তেমন কুদরতি কাজ কেবল তারই পক্ষে সাধনকরা সম্ভব যিনি হলেন বাতেনি আলাহপাকের হুবহু জাহেরি প্রকাশ, খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ, কেননা তিনি হলেন পরমকরুনাময় আল্লাহপাকের জীবন্ত কর্মক্ষম কালাম ও পাকরূহ, যিনি কুমারী মরিয়ম নাম্নি এক বিদুষী সতিসাদ্ধি নারীর গর্ভের মাধ্যমে মানবরূপে জগতে নেমে এলেন। তিনি হলেন পতীত বিশ্বের জন্য রহমতের এক বিশেষ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে গুনাহগার আদম জাতিকে পুনুরুদ্ধার করতে পারেন। মসিহ এক চূড়ান্ত মূল্য দিলেন নিজের পূতপবিত্র রক্তের মূল্যে, বিশ্বের পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ দিতে। তিনি দুনিয়াতে এসেছেন হারানো মানিক খুঁজে নেবার জন্য। কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব এ অসাদ্ধ সাধন করা। কেননা তিনি হলেন সম্পূর্ণ এক বেগুনাহ ব্যক্তি যাকে মাবুদ মানবজাতিকে নাজাত দেবার সার্বিক ক্ষমতা ও অধিকার প্রদান করেছেন। আর এ ব্যবস্থার ঘোষণা বহুপূর্বে, অর্থাৎ আদমের পতনের সময় তিনি উচ্চারণ করেছেন। কিতাবুল মুকাদ্দস পয়দায়েশ নামক ছহিফায় ৩ ঃ ১৫ দেখলে বিষয়টি পাঠকের কাছে হবে পরিষ্কার।
মানুষের সাথে মানুষের অমিল দলাদলি ঠিক তখনই হবে দূরিভুত যখন তাদের শরীর থেকে কালবিষ অর্থাৎ পাপ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব হবে। খোদার সাথে আপনি তখনই মিলিতে পারবেন, যখন আপনি হতে পারবেন সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। কেননা গুনাহের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠতে পারে না। যেমন আলো আর অন্ধকারের সাথে কষ্মিন কালেও মিলন করিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। নবী-রাসুলগণ ধার্মিকতার পয়গাম বহন করেছেন বটে, তবে তাদের প্রত্যেকের জন্ম হয়েছে পতীত আদমের বীর্যে, গত্যন্তর নেই! আর শরীয়ত বলতে আমরা দশটি শরীয়ত বুঝি, তা যেন রক্ত পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত ব্যবস্থা মাত্র। উক্ত শরীয়ত সঠিকভাবে বলে দিতে পারে, কি করলে পাপ হয় আর কিভাবে হয়েছে মানুষ পতীত। কিন্তু শরীয়তের কোনো ক্ষমতা নেই পতীত ব্যক্তিকে উদ্ধার করার জন্য। তখন অবশ্যই প্রয়োজন খোদার বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োগ। খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ হলেন পাপীর বন্ধু, যেমন চিকিৎসক হলেন রোগীর বন্ধু।
মসিহ নিজের রক্তের মূল্যে আমাদের জন্য ক্রয় করে এনেছেন অভাবিত নাজাত, যা লাভ করার জন্য বিশ্বের তাবৎ বক্তিবর্গ একটা না একটা পদ্ধতি অবলম্বন করে চলছে। বিভ্রান্ত মানুষ কত কি যে করে চলছে তার ইয়াত্তা নেই। দিক-বিদিক ছুটে চলছে নাজাত পাবার জন্য। আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি, কাছিমের পিঠের উপর শেওলা তুলে খেতে, উদ্দেশ্য হলো পরিত্রাণ লাভ। দেশ-বিদেশ চষে বেড়াচ্ছে নাজাত আবিষ্কারের নিমিত্তে। মানুষ পর্যন্ত বলি দিচ্ছে নাজাত লাভের লোভে। ফলে নিজেরাও মরছে অন্যকেও মারছে। আর এর পিছনে যে অনুপ্রেরণা কাজ করছে তা কেবল খোদার কালামের অপব্যাখ্যা মাত্র। খোদা যে মহব্বত, সে খবর কতজন জানে ও মানে। সেই মানুষকে ঘৃণা করবেন, কচুকাটা করবেন, তারপরও আপনাদের প্রত্যাশা, খোদার রেজামন্দি! আকাশ-কুষুম কল্পনা ছাড়া এ ভাবনা আর কি হতে পারে? গোটা বিশ্ব ফেঁসে আছে চাটুকার ইবলিসের কুটচালে। প্রকৃত সত্য থেকে সকলেই হয়ে আছে দূরীকৃত। মানুষের ধার্মিকতা কেবল প্রত্যাখ্যাত ছেড়া ন্যাকড়াতুল্য মনে হবে যদি তা খোদার ধার্মিকতার সাথে তুলনা করা হয়। খোদা কিন্তু আমাদের পেতে চান, দিতে চান তাঁর ক্রোড়ে অনন্ত ঠাই। সেজন্যই আমাদের স্নাতশুভ্র কাফফারা মুক্ত করার জন্য মসিহকে প্রাণ দিতে হলো। কেবল প্রেমের তাগিদে তারই কাছে তিনি বারবার আমাদের ফিরিয়ে নিতে চান।
মসিহ হলেন সেই যোগ্য ব্যবস্থা যার উপর বিশ্বাস করার ফলে হতে পেরেছি এক নতুন সৃষ্টি, তিনি আমাদের সকল অপরাধির মাসুল স্বীয় পূতপবিত্র রক্তের মূল্যে শোধ দেবার ফলেই আজ আমরা বেঁচে আছি।