রাজ দরবারে যদি রাজা উপস্থিত না থাকেন তবে উক্ত প্রাসাদটিকে কিসের সাথে তুলনা করা হলে দৃষ্টান্ত স্থাপনে অসংগতি থাকে না?
যেমন একটি মানবদেহ! যে দেহে খোদা নিজেই প্রাণবায়ু ফুকে দিলেন, প্রাণবস্ত করে তুললেন; প্রজ্ঞা-ধার্মিকতা মেধা মনন সবই কার্যকর হতে শুরু করলো। কালামপাকে দেখা যায়, “খোদাভয় জ্ঞানের আরম্ভ” তাই স্বাভাবিক কারণে খোদার উপস্থিতি হলো সজীবতা, কেননা তিনি এককভাবে জীবনের মালিক, উৎস, জীবেরন ফল্গুধারা; যা কিছুই তাঁর সাথে যুক্ত থাকে, তাই থাকে প্রাণবন্ত। ভুল করা চলবেনা, খোদা বিহীন জীবন বলতে আসলে কোনো মানে হয় না, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাস যদি চলমান না থাকে তবে উক্ত দেহটিকে মরদেহ বলতে হবে। কতিপয় দুষ্টলোক ফাও পয়সা কামানোর জন্য ধূয়া তুলে থাকে “লাইফ সার্পোট দিয়ে রাখা” অথচ দেহ খাচাটি থেকে বহুপূর্বেই প্রাণবায়ু বিদায় নিয়েছে। যদি রাজার উপস্থিতি না ঘটে তবে তেমন কাঠামো যে কোনো কাজে লাগানো যেতে পারে, কিন্তু কোনোক্রমেই তা “রাজদরবার” বলে সমীহ কুড়ানো সম্ভব নয়।
বিষয়টিকে ধর্ম প্রসংগে আলোকপাত করা যাক। ধর্ম-নামক মতবাদের মর্মকথা হলো ধার্মিকতা। আর তা হলো সোজা সাপটা ব্যাখ্যা। ধার্মিকতা বিহীন মতবাদ, আর দশটি মতবাদেরই সমপর্যায় চলতে বাধ্য। যেমন পাক-প্রনালী নিয়মকানুন, ব্যবহার বিধি ইত্যাদি। বিশেষ একটি লিটারেচার জুড়ে দেয়া হয় প্রত্যেকটি যন্ত্রের সাথে। মানুষ তা মুখস্থ করে ফেলে; কখনো কখনো পুণঃপুণঃ ব্যবহারের ফলে তা এমনিতেই ধাতস্থ হয়ে যায়। তবে যন্ত্রপাতির ম্যানুয়্যাল কেবল সাহিত্যপত্রের সাথে সমমান পাবে যদি ব্যক্তির হাতে যন্ত্রটি থাকে অনুপস্থিত। যেমন প্রাণহীন দেহ সোজা কথায় মরদেহ। দ্রæততম সময়ের মধ্যে ওটাকে সৎকার করতে হবে। হয় গাড় নতুবা পোড়, একটা কিছু করো এমন প্রবণতা জনমনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মরার হাত থেকে মুক্তি লাভের জন্য।
শিক্ষাকে আলোর সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে, যা হবে যথাযথ। গৃহে যদি প্রদীপ না থাকে তবে উক্ত গৃহটি থাকে ব্যবহারের অনুপোযোগী। কেবল নিশাচর প্রাণীর আড্ডাখানা হতে পারে ওটা। মতবাদের মর্মকথা জানতে হবে সর্বাগ্রে। “কল্যাণ আর অকল্যাণ” এ দুটো অভিধা বা বিষয় নিয়ে তবে সকল মতবাদ হয়ে থাকে রচিত। কোনো মতবাদই একরাতে রচনা করা সম্ভব নয়। এর পিছনে থাকতে হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সমালোচনা পর্যালোচনা,সরেজমীনে গবেষণা, দেখা হয় সমাজের অধিকাংস ব্যক্তিবর্গ তেমন আইনের দ্বারা উপকৃত হচ্ছে কিনা। মানুষের কল্যাণকর যেকোনো মতবাদ সমাজে সহজেই হয়ে থাকে সমাদৃত।
যেকোনো মতবাদের মর্মকথা হলো মানবতা, ভুল করলে চলবে না, মানুষের মন্ডুপাত করে কল্যাণকর কোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে অবশ্যই পেষির শক্তি প্রয়োগ করতে হবে; আর কল্যাণমূলক কোনো কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় লুফে নিয়ে থাকে। ধর্মীয় মতবাদের ক্ষেত্রটি তেমনই, মানুষের কল্যাণে তা থাকতে হবে ভরপুর। শাসন শোষণ নির্যাতন নিপীড়ন করে কোনো মতবাদ বেশিদিন বলবৎ রাখা সম্ভব নয়। তীলে তীলে জমে ওঠা লাভার মতো যেকোনো এক মুহুর্তে আচমকা গর্জে ওঠবে, হবে বিষ্ফোরিত; ঠেকাবেন কি করে তেমন বিষ্ফোরণ!
মানুষ বলতে কেবল দেহটিকেই মর্যাদা দেয়া হয় না, তাকে থাকতে হবে প্রাণবস্ত; থাকবে তার মধ্যে প্রজ্ঞা ধার্মিকতা, বোধ বিবেক, সহমর্মীতা, প্রয়োজনে নিজেকে বিষর্জন দিয়েও বয়ে আনে অন্যের কল্যাণ। সমাজহিতৈষী তেমন লোকদের পিছনে সহজে মানুষ হয়ে থাকে কাতারবন্দী। প্রষ্ফুটিত ফুলের বাগানে ভ্রমর মৌমাছি নিয়ত করে আসা যাওয়া। কাগজের ফুল দিয়ে একটি বাগান সাজিয়ে প্রমান নিন, হেথা কোনো মৌমাছির গুঞ্জরণ শুনতে পান কিনা!
বিশ্বের সকল মানুষ তাকিয়ে থাকে কেবল বামুর্ডা ট্র্যায়েঙ্গের দিকে, কেউ যদি একবার হেথা ডুবে যায়, তবে তাকে আর ফিরে আসতে দেখা যায় না। সমাজনীতি ধর্মনীতি সবই আজ নিমজ্জিত কালের গহিন বার্মুডাট্র্যাঙ্গেলের অতলে। সে তো আর নিজে নিজে ফিরে আসতে পারে না, তেমন শক্তিও যে নেই তার। পারে কি মৃতদেহ পুনরায় জীবন লাভ করতে। তবে মাবুদের হাত রয়েছে তেমন কাজে পারঙ্গম। বিমূর্ত খোদার মূর্ত প্রতিনিধি খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ চার দিনের লাশ লাসারকে ডাক দিলেন, অমনি তিনি জীবিত হয়ে কবর থেকে বেরিয়ে আসলেন। সম্ভব কি হয়েছে আমার পক্ষে তেমন লাসারে পরিণত হওয়া যাকে পুনজীবিত করা হয়েছে মরণের কবল থেকে, ফিরিয়ে দেওয়া হলো পিতার সাথে পুনরায় মিলিত হবার অভাবিত শাশ্বত জীবন। আজ আমি তৃপ্ত, চমৎকৃত মসিহের কাছে, যিনি নিজের জীবনের বিনিময়ে এক চূড়ান্ত মূল্য দান করলেন আমাকে সেই অনন্ত জীবন, যা কোনো এক ভ্রান্তির লগ্নে হারিয়ে ছিলাম বার্মুডাট্রাঙ্গেলে। মসিহ আমাকে ক্রয় করে নিলেন তাঁর নিজস্ব অমূল্য সম্পদ হিসেবে, আজ আমি রাজদরবারে হলাম পরিণত। যদিওবা সৃষ্টির সুবাদে আমি একটা রাজমহল ছিলাম, কিন্তু প্রতারণার বেড়াজালে ডুবে গেলাম অতল গহ্বরে, হারিয়ে গিয়েছিলাম চিরতরে পাতালপুরে। মাবুদ মেহেরবান, এক চূড়ান্ত মূল্য দিলেন আমাকে ক্রয় করার জন্য, ফিরিয়ে আনার জন্য, পুনরায় তাঁর হস্তনির্মিত গৃহে বসবাস করার জন্য; অবশ্য কিছুটা যে মেরামত করেন নি তা বলা যাবে না। পতিত গৃহ আবাসযোগ্য করার জন্য অবশ্যই কিছুটা মেরামত করতে হয়, আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়, যা আমার ক্ষেত্রেও নয় ব্যতিক্রম। আর তেমন পরিবর্তন বা মেরামত কোনো দৈহিক পরিবর্তন নয়, তা হলো মনের পরিবর্তন, হৃদয়ে বদল, পুরাতন বখে যাওয়া পাষাণ হৃদয়ের প্রতিস্থাপন করা তাঁর স্বীয় পূতপবিত্র প্রেম ও ক্ষমাপ্লুত ঐশি হৃদয় দিয়ে। এ দায়িত্ব কেবল খোদ নির্মাতার পক্ষেই সাধন করা সম্ভব। কোনো মানুষের হাতে তেমন দায়িত্ব অর্পিত হয় নি, আর নোংড়া হাতে পতিত লোকদের প্রশ্নই জাগে না। মানুষ বরাবর বিভ্রান্ত, চাটুকারের কুটচালে সহজেই ধরা খায়। প্রথম থেকেই মানুষ তেমন মোহান্ধ হলো প্রলুব্ধকারী ইবলিসের নয়নকাড়া ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্নে। মানুষ স্বপ্ন দেখে, তবে আকাশ কুসুম স্বপ্ন যা ঘুমের ঘোরে থাকে দেখে তা তো স্বপ্ন নামে সমাদৃত হতে পারে না; প্রয়াত প্রখ্যাত ভারতীয় পÐিত আব্দুল কালামের মতে স্বপ্ন হলো তেমনট স্বপ্ন যে স্বপ্ন স্বপ্নদ্রষ্টাকে ঘুমোতে দেয় না স্বপ্ন পুরণ না হওয়া অবধি।
সৃষ্টির সুবাধে মানুষ হলো খোদার আবাসভূমি, নিজ হাতে তিনি নির্মাণ করেছেন হেথা বসবাস করার জন্য, রাজার বাস যেথা তা অবশ্যই রাজদরবার, যে কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে! প্রজ¦লিত প্রদীপ যেমন নিজের পরিচয় নিজেই তুলে ধরে, একইভাবে ধর্ম স্বীয় মর্মকথা নিজেই তুলে ধরে। ধর্ম অবশ্যই ধার্মিকতার বিষয় নিয়ে আলোকপাত করে থাকে।
মজার বিষয় হলো প্রত্যেকটি বস্তু নিজ নিজ ধার্মিকতা বা স্বধর্ম প্রকাশ করে থাকে; কথায় বলে চুম্বকের ধর্ম, জলের ধর্ম, আলোর ধর্ম ইত্যাদি। তা মানুষের ধর্ম অবশ্যই হতে হবে মানবতা। তবে মানুষ কারো হাতে, কারো প্রতিভু হিসেবে হয়েছে সৃষ্ট যে বিষয়ে অনেকেই রয়েছে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। মানুষ জানেনা বা জানলেও মানেনা সেই মৌল পরিকল্পনা যে কারণে মানুষকে নির্মাতা সৃষ্টি করেছেন।
মানুষ খোদার হাতে সৃষ্ট তাঁর অবিকল প্রতিনিধি! খোদার জবানিতে বলা চলে, আমরা আমাদের মত করে, আমাদের সাথে মিল রেখে মানুষ সৃষ্টি করি… (পয়দায়েশ ১ : ২৬-২৮)। খোদার নিজের যে ধর্ম ঐ একই ধর্ম দিয়ে তিনি মানুষ নির্মাণ করেছেন, তবে রহস্য হলো, খোদা হলেন এক বিমূর্ত প্রতীক, আর মানুষ হলো উক্ত বিমূর্ত সত্তার মূর্তমান প্রকাশ! তাই মানুষের মধ্য থেকে অবশ্য্ই প্রতিভাত হতে হবে খোদার স্বভাব আচরণ প্রেম সহমর্মীতা, পূতপবিত্রতা। তিনি পবিত্র বলে মানুষকে তাগিদ দেয়া হয়েছে শতভাগ পূতপবিত্র হবার জন্য।“আমি আল্লাহ্ তোমাদের মাবুদ। সেজন্য তোমরা আমার উদ্দেশ্য নিজেদের আলাদা করে রাখবে এবং পবিত্র হবে, কারণ আমি পবিত্র। মাটির উপরে ঘুরে বেড়ানো ছোটখাট কোন প্রাণী দিয়ে তোমরা নিজেদের নাপাক করবে না, কারণ আমি মাবুদ; তোমাদের আল্লাহ হওয়ার জন্য মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছি” (লেবীয় ১১ : ৪৪)।
প্রশ্ন হলো, মানুষ আজ চরমভাবে ধরা খাওয়া, সম্পূর্ন পরাভুত, হয়ে আছে হতচ্ছাড়া। কোনো দলিলের ফটোকপি অবহেলার কারণে যখন অস্পষ্ট ও বিকৃত হয়ে পড়ে, পাঠোদ্দার করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, তখন আর একটি নতুন ফটোকপির প্রয়োজন হয়ে পড়ে, আর তা করতে হলে আসল দলিলের সাহায্য নিতে হবে। মানুষ যখন পুনরায় খোদার পরশ লাভ করতে সক্ষম হয়, ঠিক তখনই তার জীবন বদলে যায়, আসল লিপি তার মধ্য থেকে পাঠ করা সম্ভব হয়। মসিহ তাই যথার্থ বলেছেন, যে ব্যক্তি শতভাগ পবিত্র মসিহকে দেখতে পেয়েছে সে অদেখা খোদাকে দেখার সুযোগ লাভ করেছে, হয়েছে ধন্য। মসিহের হাতে যতজন নতুন জীবন লাভ করেছে, তাদের স্বভাব আচরণ অবশ্যই মসিহের আচরণের মত পরিবর্তিত হয়ে গেছে।উক্ত ব্যক্তি নতুনভাবে সৃষ্ট হলো। পুরাতন স্বভাব আচরণ সম্পূর্ণ বদল হয়ে গেল, যে কাজ কেবল খোদার দ্বারা খোদার হাতে হয়ে থাকে সাধিত। মানুষের কঠিন হৃদয়ের পরিবর্তন হয়ে থাকে অর্থাৎ মসিহের কোমল হৃদয়ের দ্বারা অপসারিত হয়ে থাকে। অবশ্য তিনি নিজেই আমাদের বেছে নিয়েছেন, ক্রয় করেছেন এক চুড়ান্ত মূল্য দিয়ে, আর তা মসিহের নিজের জীবনের দামে। মানুষের মনের পরিবর্তনের পিছনে যে রহস্য থাকে লুকায়িত তা হলো পরিবর্তন কেবল মসিহের হাতে, মসিহের রক্তের দামে ক্রীত। মানুষের অবদান তেমন ক্ষেত্রে কিছুই থাকলো না, যেন কোনো ব্যক্তি গর্ব করতে না পারে। গালাতীয় পত্রে বিষয়টি যথার্থ বর্ণীত রয়েছে (গালাতীয় ৩ : ২৬)। ইউহোন্না লিখিত সুসমাচারে বিষয়টি এভাবে বর্ণিত রয়েছে, “তোমরা আমাকে বেছে নাও নি বরং আমি তোমাদের বাছাই করেছি… (ইউহোন্না ১৫ : ১৬), তাছাড়া ঐ একই সুসমাচারে ঘোষণা রয়েছে, “আমার আরও মেষ আছে… (ইউহোন্না ১০ : ১৬)।
এতক্ষণে মৌল কথায় আসা যাক, মানুষের স্বভাব আচরণ অবশ্যই হতে হবে পূতপবিত্র বেগুনাহ মসিহের স্বভাব আচরণ। তিনি মানুষের প্রতি ছিলেন এতটাই দয়ার্দ্র, মানুষকে রক্ষা করার জন্য, তাদের ক্রীত পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ দেবার জন্য নিজের পূতপবিত্র রক্ত করেছেন ক্ষরণ। মানুষ মসিহের রক্তের দামে ক্রীত।