খোদার পথ আর জগতের পথ অবশ্যই ভিন্ন ধর্মী দুটি অবস্থা। যেমন দিবালোক আর রাতের নিকশ কালো আঁধার, সুখ-দুঃখ, সত্য-মিথ্যা, প্রেম ঘৃণা, ত্যাগ স্বার্থপরতা। এমনি করে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থা বা শক্তি হলো খোদা ও ইবলিসের পথ।
মানুষ খোদার পথ চেনে না, যা কিছু সে করে চলছে তা হলো পংকে নিমজ্জিত অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার প্রচেষ্টা মাত্র। প্রথম মানুষ আদমের পতনের সাথে সাথে গোটা বিশ্ববাসি হলো বিতাড়িত, আজ পর্যন্ত আমরা তেমন বিশ্বে জ¦লেপুড়ে বসবাস করে চলছি, চলতে হচ্ছি বাধ্য। আমরা সকলে নিরুপায়, গত্যন্তর নেই।
বিজ্ঞানের অবদান মানুষের চলাচল সহজ করে দিচ্ছে, তবে এমন কোনো সৃষ্টি আমাদের উপহার দিতে পারে নি, যার মাধ্যমে খোদার সাথে হতে পারবো পুনর্মিলিত। যুগে যুগে নবী-রাসুল তথা আউলিয়া আম্বিয়ার আগমন ঘটেছে সত্য, তারা ক্ষণপ্রভার মতো জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, চোখ ধাধিয়েছে এবং এক সময় কালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেছে। তারা যে সকল হেদায়েত বাণী রেখে গেছে তা বাস্তবতার কষ্ঠি পাথরে ঘর্ষণের ফলে ফিকে হয়ে গেছে। কেননা তারা সকলেই ছিলেন অবাধ্য ও পতিত আদমের বংশধর। তাদের জন্ম এই মাটিতে আর মিশেও গেছে অত্র মাটিতে। অবশ্য তারা আজ বাণিজ্যের পণ্যে হয়েছে পরিণত। মানবতার মুক্তি তাদের হাতে ছিল না বা নেই। নিজেদের মুক্তির উপায় তারা জানতো না, আর নিজে না জানলে পাড়া-প্রতিবেশিকে জানাবেই বা কেমন করে!
মুক্তির পথ ও নিপুণ ব্যবস্থা অবশ্যই আসতে হবে খোদ মালিকের কাছ থেকে। আপনি দেশ-বিদেশ যতই ভ্রমন করে আসুন না কেন, তাতে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে, কিন্তু মুক্তির পথ থাকবে সুদূর পরাহত। পৃথিবীর মধ্যে এমন কোনো বস্তু নেই যার বিনিময়ে আপনি পাপের কবল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে গেলেন। আপনি যে দেহ তরীতে নিয়ত বন্দি হয়ে আছেন, আপনার কর্মকান্ডগুলো অত্র তরী মেরামত করার জন্যই থাকছে নিয়োজিত। অন্ন চাই, বস্র চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই। আর ওগুলো যখন পর্যাপ্ত পরিমানে মিটে গেল, তারপর আর কি বাকি থাকলো স্লোগানের সমর্থনে! টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে সব আন্দোলন গ্যাস ভর্তি বেলুনের মতো মুহুর্তেই চুপসে যায়, যেতে দেখেছি।
তারপরেও একটি কথা থেকে যায়, আর তা হলো, মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না, মানুষ বেঁচে থাকে খোদার মুখনিসৃত অমূল্য অমীয় বাক্যে। খোদার অদৃশ্য বাক্য আমরা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছি খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহের মাধ্যমে। ঐশি রূহ মানব শিশু হয়ে ধরাপৃষ্টে হলেন আবির্ভূত। শতভাগ বেগুনাই জীবন যাপন করে মানুষের কাছে পবিত্রতার একক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। আপনি তাঁকে যে নামেই ডাকেন না কেন, তা আপনার নিজস্ব ভাষার বিষয়, তিনি এসেছেন গোটা বিশ^বাসিকে খুঁজে নেবার জন্য। মানুষ আজ লাইনচ্যুত, আর এ পতন ঘটেছে প্রথম মানুষ আদম (আঃ) থেকে। আদম থেকে শুরু করে সকলেই গুনাহগার, খোদার ক্রোড়ে ফিরে যেতে হলে অবশ্যই তাদের পাপের ঋণ শোধ দিতে হবে, হতে হবে স্নাতশুভ্র। একজন গুনাহগার আর একজন গুনাহগারের মুক্তির কোনো ব্যবস্থা বয়ে আনতে পারে নি। নিখুঁত পশু কোরবানি দেবার প্রতীক, তদ্রুপ বেগুনাহ মেষের আবশ্যকতা রয়েছে মানুষের পাপের কাফফারা পরিশোধকল্পে। মেহেরবান খোদা নিজেই তেমন রুহানি মেষের ব্যবস্থা করলেন তাঁর স্বীয় রূহ মানব শিশুরূপে জগতে প্রেরণ করে। আর তেমন শিশু হলেন খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ। সম্পূর্ণ ঐশি সত্ত্বা মানবরূপে আত্মপ্রকাশ করলেন, উদ্দেশ্য মানুষের পাপের কাফফারা পরিশোধকল্পে কোরবানি।
গোটা বিশ্ববাসি আজ পাপ অপরাধ থেকে মুক্ত কেবল মসিহের আত্মত্যাগের ফলে।