কোনো এক পরিচিতি পর্বে যোগ দিয়ে নিজেকে বড়ই অসহায় বেওকুফ মনে হচ্ছিল। নাম ধাম পিতৃ পরিচয় ইত্যাদি দিতে কোন চুড়ান্ত পর্যায়ে যে চলে গেলাম, মনে মনে ভাবছিলাম, অত্র সভায় যোগ না দেয়াই ভাল ছিল।
সকলে আমার মুখপানে এমনভাবে তাকিয়ে ছিল, এমন ভাব করছিল, প্রত্যেকের মুখখানা যেন বাংলার পঞ্চম সংখ্যায় পরিণত।
বলুন, তারা আমাকে কেন চিনতে পারলো না; তা কি তাদের অজ্ঞতা না অনিহা; তা যাই হোক না কেন, আমাকে অপ্রতিভ কোণঠাসা করে দেবার প্রচেষ্টা ভারি অন্যায়, পরিষ্কার করে আমি তা বলতে পারি।
বলে রাখি, পরিচিতি পর্বটি ছিল ধর্মীয় সভার প্রথম অংশ। যে বিজ্ঞ শুধীজন বা তাদের দ্বারা গঠিত সভাসদবৃন্দ তথাকার আহŸায়ক তারা সকলেই একই ধর্ম মতে বিশ্বাস স্থাপনকারী; আপাতদৃষ্টিতে তেমনটা ভেবে নেয়া নৈয়ায়িক বটে।
মনে মনে চিন্তা করলাম, এই লোকগুলো যদি মানবেতিহাস জানতো তবে পরিচিতি পর্বটি এতটা সুদীর্ঘ ও জটিল করে তুলতো না। তাদরে জানা প্রয়োজন, মানুষ খোদার হাতে তারই সুরতে, ঐশি রুহানি গুনাবলী দিয়ে সৃষ্ট করা, আর মাত্র একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন; দোয়া করেছেন, প্রজাবন্ত ও বহুসংখ্যায় প্রবৃদ্ধিলাভ করে গোটা বিশ^টি আবাদযোগ্য আবাসযোগ্য করে তোলার প্রয়োজনে।
তারা লোভের বসবর্তী হয়ে খোদার হুকুমের চাইতে দুষ্ট আত্মা, খোদা ও মানুষের শত্রু, ইবলিসের কুটচালে ধরা দিল। হলো খোদাদ্রোহী। ফলস্বরূপ উভয়েই হলো বিতাড়িত খোদার মনোনীত কানন থেকে; সুতরাং, অপব্যায়ী পুত্রের মতো দুর্ভোগের অন্ত আর রইল না তাদের জীবনে।
জন্মের দিক দিয়ে সকল মানুষ একই অবাধ্য আদমের বংশধর, আর গুনাহের দিক দিয়ে একই পরিচয়ে সকলে পরিচিত; আর তা হলো গুনাহগার (রোমীয় ৩ : ২৩)। ব্যাস, এ হলো মানুষের সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
যেহেতু ধর্মসভা, তাই তাদের বক্তব্য হলো, মানুষ পুনরায় যাতে মানুষ হতে পারে, হারানো সন্তান পারে আপন পিতৃগৃহে ফিরে যেতে, সে ব্যবস্থার বিষয়ে হেথা আলোচনা চলছিল। যেহেতু সকলেই পাপ করেছে, হয়েছে বিতাড়িত, খোদার অবয়ব সুরত হারিয়ে প্রত্যেকে বিকৃত মুখচ্ছবি ধারণ করেছে, তাই সর্বোৎকৃষ্ট পারঙ্গম বিজ্ঞ ঐশি ক্ষমতাধর সুচিকিৎসকের আগমন ঘটেছে পতীত ধরাপৃষ্টে যার কাছে আসতে পারলেই মানুষ, অবলীলাক্রমে, ফিরে পেতে পারে আসল চেহারা, আসল রূপ, যা হলো, মানুষ হলো বাতেনী খোদার জাহেরী প্রকাশ; যে মানুষ দেখেছে, সেতো খোদার মুখচ্ছবি প্রত্যক্ষ করার অপূর্ব অভাবিত সুযোগ পেল, হলো ধন্য চিরদিনের জন্য। সমস্ত চাওয়া পাওয়া আশা আকাঙ্খার পরিসমাপ্তি ঘটে গেল তেমন ব্যক্তির।
জন্মসূত্রে মানুষ হলো পতিত আদমের ঔরষজাত সন্তান, কোনো ব্যাত্যয় ঘটার কোনোই কারণ নেই তেমন চিন্তায়, সকলেই গুনাহগার! আর নতুন জন্মসূত্রে তারা ফিরে পেল হারানো অধিকার, খোদা যে গুনাবলী, উপঢৌকন হিসেবে, তাদের সকলকে দান করেছেন; আর সেই ঐশি অধিকারপ্রাপ্ত দরদী চিকিৎসক হলেন বেগুনাহ ব্যক্তি খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ। তিনি আদমের হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের তালাশ করতে ও স্নাতশুভ্র করার জন্য কলুষিত মহীতলে হয়েছেন আবির্ভুত। একমাত্র তিনিই হলেন শতভাগ পূতপবিত্র মানবরূপী খোদা, যার মধ্যে রয়েছে দৈবশক্তি, প্রেম, মমতা ও ক্ষমাসুলভ দৃষ্টি, আর সে কাণেই তিনি মৃত ব্যক্তিকে পর্যন্ত জীবিত করে তুলতে পেরেছেন। অন্ধ, খঞ্জ, বোবা-বধির, অবস রোগীদের মুখের কথায় সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেছেন। প্রয়োজনের তাগিদে তিনি এতশত কাজ করেছেন, এবং সর্বোপরি তিনি সকলকে করেছেন গুনাহ ও পাপ থেকে মুক্ত, যে সার্বজনীন পাপ গোটা বিশ^টাকে নরকে রূপান্তরিত করে তুলেছে। নারকীয় আগুনের লেলীহান শিখা একমাত্র তিনিই নিভিয়ে দিয়েছেন; করেছেন অভিশপ্ত ইবলিসের মস্তক চূর্ণবিচূর্ণ। ইবলিসের সার্বিক সুক্ষ্ম চালাকি তিনি নাকাম করে দিয়েছেন। সত্যিকারার্থে যারাই আজ তাঁকে বিশ্বাস পূর্বক মুক্তিদাতা হিসেবে মেনে নিয়েছে, তাদের জীবনে ক্রমে ক্রমে আশির্বাদের ফল্গুধারা বইতে শুরু করেছে। জগত তেমন পরিবর্তন আপন আপন চোখে দেখে হতবাক; তবে যাদের রয়েছে তেমন দৃষ্টি শক্তি, স্বচ্ছ চোখ, বিচক্ষণতা, তাদের পক্ষে কষ্টকর হতে পারে না তাঁর রুহানী ক্ষমতা ও প্রভাবে সাধিত পরিবর্তন পরিদর্শন করা।
মসিহ যে প্রতিজ্ঞা করেছেন তা হলো, “তবে যতজন তাঁর উপর ঈমান এনে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি আল্লাহর সন্তান হবার অধিকার দিলেন (ইউহোন্না ১ : ১২)। “চোর কেবল চুরি, খুন ও নষ্ট করবার উদ্দেশ্য নিয়েই আসে। আমি এসেছি যেন তারা জীবন পায়, আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ হয়” (ইউহোন্না ১০ : ১০)।
মসিহ যেভাবে মানুষের পাপের কাফফারা পরিশোধ দিলেন তা কোনো গুনাহগার আদম সন্তানদের পক্ষে ভাবনা করাও অবান্তর। পিতা তাকে বিশেষ এক দায়িত্ব দিয়েছেন গুনাহগারদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ করে হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের পিতৃক্রোড়ে ফিরিয়ে দেবার। ঈসা মার্থাকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। “ ঈসা মার্থাকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমার উপর ঈমান আনে সে মরলেও জীবিত হবে” (ইউহোন্ন ১১ : ২৫)। “ মনে রেখো, ইবনে-আদম সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন” (মার্ক ১০ : ৪৫)। “ মনে রেখো, ইবনে-আদম সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন” (মথি ২০ : ২৮)।
জগতে অবোধ জনগোষ্টির দ্বারা মতবাদে আবিষ্ট হবো না; যেমন বেলাভুমে খোলাচ্ছলে শিশুরা বালু দিয়ে ছবি আঁকে, গৃত নির্মাণ করে কত আমোদ লাভ করে থাকে, তেমন কাজে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে, হঠাৎ করে আর দ্বিগুণ উৎসাহভরে একটা ঢেউ এসে সবকিছু সমান করে দিয়ে যায়। যেই সমতল বেলাভূম, নিমিশের মধ্যেই তা চলে গেল পূর্বের পর্যায়ে; বালুর বাধ ঢেউয়ের ভাব সামলাতে পারলো না। তবে, মজার বিষয় লক্ষণীয়, শিশুরা কিন্তু পুনরায় পূর্ব মনোনীত কাজে ডুবে গেল।
মানুষের গড়া মুক্তির প্রেসক্রিপশন বা বিধানসমূহ আজ করোনারূপী ঢেউয়ের মুখে বিলিন হয়ে গেল অবলীলাক্রমে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কেউ বলতে পারছেনা কোনো কথা। সমানে সমানে গিলে নিচ্ছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। এ কেমন বোবা ঢেউ, দোহাই মানে না। বিগত বিংশ শতকে প্রচলিত ছিল “দোহাই আইউব খান” অর্থাৎ ১৯৫৬খৃষ্টাব্দে পাকিস্তানে মিলিটারী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল তদানীন্তন ফিল্ড মার্শাল মোঃ আইউব খান। তার শাসন ছিল অতীব কঠিন, আপোষহীন। যাকে বর্তমানে বলা হয়ে থাকে জিরো টলারেন্স। সকলকে শতভাগ সঠিকভাবে থাকতে হবে কর্মনিপূর্ণ কর্মব্যস্ত; ঘুষ দুর্ণীতির দ্বারা সত্যকে মিথ্যা বানানো চলবে না। ন্যায়ের সাথে অপরাধের মিশ্রণ করা চলবে না, যেমন এক বালতি দুধের মধ্যে এক ফোটা গোচনা পুরো দুধ নষ্ট করে ছাড়ে। তদ্রুপ সত্যের সাথে একটুখানি মিথ্যার বা অসত্যের সংযোগ মিশ্রণে কি আর এমন হতে পারে! যে কোনো গভীর খাদে বা পাত কুয়োর তলদেশে এক লাফে পোছা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে তাকে এগিয়ে চলতে হয়; তা অবতরণ আর উত্তরণ যাই বলুন না কেন?
একজন শিদ্ধহস্ত চোরের কথাই বলুন, কথায় বলে কচুগাছ কেটে কেটে ডাকাতে পারিণত হয়। চোরা শুরু করে গুরুজনদের পকেট থেকে ২/৪খানা টাকার নোট বা যদি খুচরা পয়সা থাকে, তা চুরি করে। ধিরে ধিরে উক্ত চোরা হতে থাকে শিদ্ধহস্ত।
বদ অভ্যাসগুলো এমন করে ব্যক্তি চরিত্রকে কলুষিত করে চলে; যদি যাত্রারম্ভে বা শুরুতে বাধা দেয়া সম্ভব হয়ে না ওঠে।
আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো পরিচিতি।
কথায় বলে, করণীয় কাজ অনেক তবে সময় কুলোয় না। ইংরেজিতে প্রবাদটি হলো ‘Art is long but time is short’। আমাদের মৌলিক কাজে হাত দিতে হবে সর্বাগ্রে। মানুষ গুনাহগার পতীত আর পাইকারীহারে সকলেই। প্রভেধ নেই!
আসলে প্রত্যেকেই যে মানুষ, উক্ত প্রথম মানুষের ঔরষজাত সন্তান, তাতে কোনো ব্যাত্যয়ের প্রশ্ন জাগে না। তবে কথা থেকে যায়, সকলে একই পরিবেশে মানুষ হতে পারেনি। পরিবেশ ব্যক্তিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে থাকে। কথায় বলে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। চাই সেই সৎ ব্যক্তির সাহচর্জ। কোথায় পাবো তেমন ব্যক্তিকে খুঁজে। আদমের বংশে তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই; উদ্বেগাকুল হবার কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে না। যাদের মোটামুটি জ্ঞান আছে ধর্মীয় প্রসঙ্গে, অথবা তত্তে¡র বিষয় তথা ইতিহাস নিয়ে যারা ঘাটাঘাটি করেন তাদের কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার হতে বাধ্য, সকল মানুষই ঘাটতির শিকার। ঘাটতির আর এক নাম হতে পারে নূন্যতা, আর তা বুঝতে হলে ষোল আনার সাথে তুলনা করতে হবে। কথায় বলে মানুষ মাত্রই ঘাটতির শিকার। আর তা তুলনা করা হয়েছে খোদ নির্মাতার সাথে। নির্মাতা যেমন সম্পূর্ণ খাটি, তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে চাইলে তাঁরই মত সম্পূর্ণ নিষ্পাপ জীবন-যাপন করতে হবে। তিনি যেমন বলেছেন, আমি পবিত্র বলে তোমরাও পবিত্র হও (লেবীয় ১১ : ৪৪)। মূসা নবীর মাধ্যমে খোদা দশটি বিধি বিধান প্রদান করেছেন, মানুষের ধার্মিকতার মাপকাঠী হলো উক্ত আজ্ঞা সমূহ।
এদন উদ্যান থেকে বিতাড়িত হওয়া তা কেবল ঘাটতির প্রথম প্রমাণ, আর দ্বিতীয় প্রমান হলো ভ্রাতা হনন। আজ সকলেই ইবলিসের তাবেদার
তবে মানুষের হৃদয়জুড়ে সার্বক্ষণিকভাবে আকুতি কাজ করে চলছে। ফিরে যাবো পিতৃগৃহে যা হলো গোটা জীবনের বাসনা, সাধনা; বিধি ব্যবস্থা পাঠ করতে কম কার্পণ্যতা দেখা যায় না। পাঠ বলছি এজন্য, সকলেই পাঠ করে। কেউবা মুখস্ত করে রাখে, তবে আপন আপন জীবনে প্রয়োগ করার সাধ্বি কারো নেই। সকলের একই দশা, নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সাত মন তেল যোগাড় হয় না আর রাধাও নাচে না।
খোদার সাথে আমরা যদি তুলনা করি তবেই আমাদের তর্ক বন্ধ হতে বাধ্য, আমরা সকলে নাপাক (ইশাইয়া ৬৪ : ৬, ৮-১২)।
এবার আমাদের পরিচয় পর্ব সমাপ্ত; মুল সভা শুরু করা যাবে, আর সকল আলোচনান্তে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঐশি তনয় বেগুনাহ মসিহ ব্যাতীত আর কেউ নেই যার মাধ্যমে আমরা পুনরায় খোদার চোখে পূতপবিত্র হতে পারব আর খোদার ক্রোড়ে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আমাদের সকলের গুনাহের কাফফারা শোধ দিলেন মর্মবিদারক সলিবে আত্মকোরবানির দ্বারা; সম্পূর্ণ নিখুঁত ঐশি মেষ পতিত জাতির জন্য হলো জবেহ করা; পূতপবিত্র রক্ত ক্ষরিত হলো গুনাহগারদের সার্বিক গুনাহখাতাহ ধুয়ে ফেলার জন্য, সম্পূর্ণ নতুন সৃষ্টি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। কাফফারা সাধনকারী ক্ষরিত রক্ত নিভিয়ে দিল খোদার ক্রেধ, কেবল বিশ্বাসে ব্যক্তি হতে পারলো সম্পূর্ণ স্বাধীন, মুক্তপাপ।
কষ্টার্জিত, চূড়ান্ত মুল্যে অর্জিত স্বাধীনতা ক্ষণিকের মাংশিক অভিলাস পুরণ করতে গিয়ে নাপাক করা কারো পক্ষে সাজে না। তবে কুকুর আর শুকরের ক্ষেত্রে কথাটা নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়। কেননা ধৌত শুকর পুনরায় ময়লায় গড়াগড়ি খায় আর কুকুর নিজ বমির দিকে ফিরে।
আমরা মানুষ, আমরা খোদার নয়ণের মণি তুল্য অতীব যতœ আদরে হয়ে চলেছি লালিত পালিত। মসিহ আমাদের ধরে রাখছেন ন্যায়, সত্য প্রেম পবিত্রতা প্রচার করার নিমিত্তে। সমূদয় বিশে^ আজ নতুন জন্মপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ বিস্বস্থভাবে আলোর কেতন নিয়ে ফিরছে। আমাদের রয়েছে অনির্বাণ শিখা যা সদাসর্বদা তুলে রাখতে হবে বিশে^র দরবারে, যাতে কেউ যেন আর অন্ধকারে গুমরে না মরে (মথি ৫ : ১৪-১৬)।
সকলে আমার মুখপানে এমনভাবে তাকিয়ে ছিল, এমন ভাব করছিল, প্রত্যেকের মুখখানা যেন বাংলার পঞ্চম সংখ্যায় পরিণত।
বলুন, তারা আমাকে কেন চিনতে পারলো না; তা কি তাদের অজ্ঞতা না অনিহা; তা যাই হোক না কেন, আমাকে অপ্রতিভ কোণঠাসা করে দেবার প্রচেষ্টা ভারি অন্যায়, পরিষ্কার করে আমি তা বলতে পারি।
বলে রাখি, পরিচিতি পর্বটি ছিল ধর্মীয় সভার প্রথম অংশ। যে বিজ্ঞ শুধীজন বা তাদের দ্বারা গঠিত সভাসদবৃন্দ তথাকার আহŸায়ক তারা সকলেই একই ধর্ম মতে বিশ্বাস স্থাপনকারী; আপাতদৃষ্টিতে তেমনটা ভেবে নেয়া নৈয়ায়িক বটে।
মনে মনে চিন্তা করলাম, এই লোকগুলো যদি মানবেতিহাস জানতো তবে পরিচিতি পর্বটি এতটা সুদীর্ঘ ও জটিল করে তুলতো না। তাদরে জানা প্রয়োজন, মানুষ খোদার হাতে তারই সুরতে, ঐশি রুহানি গুনাবলী দিয়ে সৃষ্ট করা, আর মাত্র একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন; দোয়া করেছেন, প্রজাবন্ত ও বহুসংখ্যায় প্রবৃদ্ধিলাভ করে গোটা বিশ^টি আবাদযোগ্য আবাসযোগ্য করে তোলার প্রয়োজনে।
তারা লোভের বসবর্তী হয়ে খোদার হুকুমের চাইতে দুষ্ট আত্মা, খোদা ও মানুষের শত্রু, ইবলিসের কুটচালে ধরা দিল। হলো খোদাদ্রোহী। ফলস্বরূপ উভয়েই হলো বিতাড়িত খোদার মনোনীত কানন থেকে; সুতরাং, অপব্যায়ী পুত্রের মতো দুর্ভোগের অন্ত আর রইল না তাদের জীবনে।
জন্মের দিক দিয়ে সকল মানুষ একই অবাধ্য আদমের বংশধর, আর গুনাহের দিক দিয়ে একই পরিচয়ে সকলে পরিচিত; আর তা হলো গুনাহগার (রোমীয় ৩ : ২৩)। ব্যাস, এ হলো মানুষের সংক্ষিপ্ত পরিচয়।
যেহেতু ধর্মসভা, তাই তাদের বক্তব্য হলো, মানুষ পুনরায় যাতে মানুষ হতে পারে, হারানো সন্তান পারে আপন পিতৃগৃহে ফিরে যেতে, সে ব্যবস্থার বিষয়ে হেথা আলোচনা চলছিল। যেহেতু সকলেই পাপ করেছে, হয়েছে বিতাড়িত, খোদার অবয়ব সুরত হারিয়ে প্রত্যেকে বিকৃত মুখচ্ছবি ধারণ করেছে, তাই সর্বোৎকৃষ্ট পারঙ্গম বিজ্ঞ ঐশি ক্ষমতাধর সুচিকিৎসকের আগমন ঘটেছে পতীত ধরাপৃষ্টে যার কাছে আসতে পারলেই মানুষ, অবলীলাক্রমে, ফিরে পেতে পারে আসল চেহারা, আসল রূপ, যা হলো, মানুষ হলো বাতেনী খোদার জাহেরী প্রকাশ; যে মানুষ দেখেছে, সেতো খোদার মুখচ্ছবি প্রত্যক্ষ করার অপূর্ব অভাবিত সুযোগ পেল, হলো ধন্য চিরদিনের জন্য। সমস্ত চাওয়া পাওয়া আশা আকাঙ্খার পরিসমাপ্তি ঘটে গেল তেমন ব্যক্তির।
জন্মসূত্রে মানুষ হলো পতিত আদমের ঔরষজাত সন্তান, কোনো ব্যাত্যয় ঘটার কোনোই কারণ নেই তেমন চিন্তায়, সকলেই গুনাহগার! আর নতুন জন্মসূত্রে তারা ফিরে পেল হারানো অধিকার, খোদা যে গুনাবলী, উপঢৌকন হিসেবে, তাদের সকলকে দান করেছেন; আর সেই ঐশি অধিকারপ্রাপ্ত দরদী চিকিৎসক হলেন বেগুনাহ ব্যক্তি খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহ। তিনি আদমের হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের তালাশ করতে ও স্নাতশুভ্র করার জন্য কলুষিত মহীতলে হয়েছেন আবির্ভুত। একমাত্র তিনিই হলেন শতভাগ পূতপবিত্র মানবরূপী খোদা, যার মধ্যে রয়েছে দৈবশক্তি, প্রেম, মমতা ও ক্ষমাসুলভ দৃষ্টি, আর সে কাণেই তিনি মৃত ব্যক্তিকে পর্যন্ত জীবিত করে তুলতে পেরেছেন। অন্ধ, খঞ্জ, বোবা-বধির, অবস রোগীদের মুখের কথায় সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেছেন। প্রয়োজনের তাগিদে তিনি এতশত কাজ করেছেন, এবং সর্বোপরি তিনি সকলকে করেছেন গুনাহ ও পাপ থেকে মুক্ত, যে সার্বজনীন পাপ গোটা বিশ^টাকে নরকে রূপান্তরিত করে তুলেছে। নারকীয় আগুনের লেলীহান শিখা একমাত্র তিনিই নিভিয়ে দিয়েছেন; করেছেন অভিশপ্ত ইবলিসের মস্তক চূর্ণবিচূর্ণ। ইবলিসের সার্বিক সুক্ষ্ম চালাকি তিনি নাকাম করে দিয়েছেন। সত্যিকারার্থে যারাই আজ তাঁকে বিশ্বাস পূর্বক মুক্তিদাতা হিসেবে মেনে নিয়েছে, তাদের জীবনে ক্রমে ক্রমে আশির্বাদের ফল্গুধারা বইতে শুরু করেছে। জগত তেমন পরিবর্তন আপন আপন চোখে দেখে হতবাক; তবে যাদের রয়েছে তেমন দৃষ্টি শক্তি, স্বচ্ছ চোখ, বিচক্ষণতা, তাদের পক্ষে কষ্টকর হতে পারে না তাঁর রুহানী ক্ষমতা ও প্রভাবে সাধিত পরিবর্তন পরিদর্শন করা।
মসিহ যে প্রতিজ্ঞা করেছেন তা হলো, “তবে যতজন তাঁর উপর ঈমান এনে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি আল্লাহর সন্তান হবার অধিকার দিলেন (ইউহোন্না ১ : ১২)। “চোর কেবল চুরি, খুন ও নষ্ট করবার উদ্দেশ্য নিয়েই আসে। আমি এসেছি যেন তারা জীবন পায়, আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ হয়” (ইউহোন্না ১০ : ১০)।
মসিহ যেভাবে মানুষের পাপের কাফফারা পরিশোধ দিলেন তা কোনো গুনাহগার আদম সন্তানদের পক্ষে ভাবনা করাও অবান্তর। পিতা তাকে বিশেষ এক দায়িত্ব দিয়েছেন গুনাহগারদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ করে হারিয়ে যাওয়া সন্তানদের পিতৃক্রোড়ে ফিরিয়ে দেবার। ঈসা মার্থাকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। “ ঈসা মার্থাকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমার উপর ঈমান আনে সে মরলেও জীবিত হবে” (ইউহোন্ন ১১ : ২৫)। “ মনে রেখো, ইবনে-আদম সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন” (মার্ক ১০ : ৪৫)। “ মনে রেখো, ইবনে-আদম সেবা পেতে আসেন নি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন” (মথি ২০ : ২৮)।
জগতে অবোধ জনগোষ্টির দ্বারা মতবাদে আবিষ্ট হবো না; যেমন বেলাভুমে খোলাচ্ছলে শিশুরা বালু দিয়ে ছবি আঁকে, গৃত নির্মাণ করে কত আমোদ লাভ করে থাকে, তেমন কাজে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে, হঠাৎ করে আর দ্বিগুণ উৎসাহভরে একটা ঢেউ এসে সবকিছু সমান করে দিয়ে যায়। যেই সমতল বেলাভূম, নিমিশের মধ্যেই তা চলে গেল পূর্বের পর্যায়ে; বালুর বাধ ঢেউয়ের ভাব সামলাতে পারলো না। তবে, মজার বিষয় লক্ষণীয়, শিশুরা কিন্তু পুনরায় পূর্ব মনোনীত কাজে ডুবে গেল।
মানুষের গড়া মুক্তির প্রেসক্রিপশন বা বিধানসমূহ আজ করোনারূপী ঢেউয়ের মুখে বিলিন হয়ে গেল অবলীলাক্রমে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কেউ বলতে পারছেনা কোনো কথা। সমানে সমানে গিলে নিচ্ছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। এ কেমন বোবা ঢেউ, দোহাই মানে না। বিগত বিংশ শতকে প্রচলিত ছিল “দোহাই আইউব খান” অর্থাৎ ১৯৫৬খৃষ্টাব্দে পাকিস্তানে মিলিটারী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল তদানীন্তন ফিল্ড মার্শাল মোঃ আইউব খান। তার শাসন ছিল অতীব কঠিন, আপোষহীন। যাকে বর্তমানে বলা হয়ে থাকে জিরো টলারেন্স। সকলকে শতভাগ সঠিকভাবে থাকতে হবে কর্মনিপূর্ণ কর্মব্যস্ত; ঘুষ দুর্ণীতির দ্বারা সত্যকে মিথ্যা বানানো চলবে না। ন্যায়ের সাথে অপরাধের মিশ্রণ করা চলবে না, যেমন এক বালতি দুধের মধ্যে এক ফোটা গোচনা পুরো দুধ নষ্ট করে ছাড়ে। তদ্রুপ সত্যের সাথে একটুখানি মিথ্যার বা অসত্যের সংযোগ মিশ্রণে কি আর এমন হতে পারে! যে কোনো গভীর খাদে বা পাত কুয়োর তলদেশে এক লাফে পোছা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে তাকে এগিয়ে চলতে হয়; তা অবতরণ আর উত্তরণ যাই বলুন না কেন?
একজন শিদ্ধহস্ত চোরের কথাই বলুন, কথায় বলে কচুগাছ কেটে কেটে ডাকাতে পারিণত হয়। চোরা শুরু করে গুরুজনদের পকেট থেকে ২/৪খানা টাকার নোট বা যদি খুচরা পয়সা থাকে, তা চুরি করে। ধিরে ধিরে উক্ত চোরা হতে থাকে শিদ্ধহস্ত।
বদ অভ্যাসগুলো এমন করে ব্যক্তি চরিত্রকে কলুষিত করে চলে; যদি যাত্রারম্ভে বা শুরুতে বাধা দেয়া সম্ভব হয়ে না ওঠে।
আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো পরিচিতি।
কথায় বলে, করণীয় কাজ অনেক তবে সময় কুলোয় না। ইংরেজিতে প্রবাদটি হলো ‘Art is long but time is short’। আমাদের মৌলিক কাজে হাত দিতে হবে সর্বাগ্রে। মানুষ গুনাহগার পতীত আর পাইকারীহারে সকলেই। প্রভেধ নেই!
আসলে প্রত্যেকেই যে মানুষ, উক্ত প্রথম মানুষের ঔরষজাত সন্তান, তাতে কোনো ব্যাত্যয়ের প্রশ্ন জাগে না। তবে কথা থেকে যায়, সকলে একই পরিবেশে মানুষ হতে পারেনি। পরিবেশ ব্যক্তিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে থাকে। কথায় বলে সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। চাই সেই সৎ ব্যক্তির সাহচর্জ। কোথায় পাবো তেমন ব্যক্তিকে খুঁজে। আদমের বংশে তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই; উদ্বেগাকুল হবার কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে না। যাদের মোটামুটি জ্ঞান আছে ধর্মীয় প্রসঙ্গে, অথবা তত্তে¡র বিষয় তথা ইতিহাস নিয়ে যারা ঘাটাঘাটি করেন তাদের কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার হতে বাধ্য, সকল মানুষই ঘাটতির শিকার। ঘাটতির আর এক নাম হতে পারে নূন্যতা, আর তা বুঝতে হলে ষোল আনার সাথে তুলনা করতে হবে। কথায় বলে মানুষ মাত্রই ঘাটতির শিকার। আর তা তুলনা করা হয়েছে খোদ নির্মাতার সাথে। নির্মাতা যেমন সম্পূর্ণ খাটি, তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে চাইলে তাঁরই মত সম্পূর্ণ নিষ্পাপ জীবন-যাপন করতে হবে। তিনি যেমন বলেছেন, আমি পবিত্র বলে তোমরাও পবিত্র হও (লেবীয় ১১ : ৪৪)। মূসা নবীর মাধ্যমে খোদা দশটি বিধি বিধান প্রদান করেছেন, মানুষের ধার্মিকতার মাপকাঠী হলো উক্ত আজ্ঞা সমূহ।
এদন উদ্যান থেকে বিতাড়িত হওয়া তা কেবল ঘাটতির প্রথম প্রমাণ, আর দ্বিতীয় প্রমান হলো ভ্রাতা হনন। আজ সকলেই ইবলিসের তাবেদার
তবে মানুষের হৃদয়জুড়ে সার্বক্ষণিকভাবে আকুতি কাজ করে চলছে। ফিরে যাবো পিতৃগৃহে যা হলো গোটা জীবনের বাসনা, সাধনা; বিধি ব্যবস্থা পাঠ করতে কম কার্পণ্যতা দেখা যায় না। পাঠ বলছি এজন্য, সকলেই পাঠ করে। কেউবা মুখস্ত করে রাখে, তবে আপন আপন জীবনে প্রয়োগ করার সাধ্বি কারো নেই। সকলের একই দশা, নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সাত মন তেল যোগাড় হয় না আর রাধাও নাচে না।
খোদার সাথে আমরা যদি তুলনা করি তবেই আমাদের তর্ক বন্ধ হতে বাধ্য, আমরা সকলে নাপাক (ইশাইয়া ৬৪ : ৬, ৮-১২)।
এবার আমাদের পরিচয় পর্ব সমাপ্ত; মুল সভা শুরু করা যাবে, আর সকল আলোচনান্তে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঐশি তনয় বেগুনাহ মসিহ ব্যাতীত আর কেউ নেই যার মাধ্যমে আমরা পুনরায় খোদার চোখে পূতপবিত্র হতে পারব আর খোদার ক্রোড়ে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আমাদের সকলের গুনাহের কাফফারা শোধ দিলেন মর্মবিদারক সলিবে আত্মকোরবানির দ্বারা; সম্পূর্ণ নিখুঁত ঐশি মেষ পতিত জাতির জন্য হলো জবেহ করা; পূতপবিত্র রক্ত ক্ষরিত হলো গুনাহগারদের সার্বিক গুনাহখাতাহ ধুয়ে ফেলার জন্য, সম্পূর্ণ নতুন সৃষ্টি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। কাফফারা সাধনকারী ক্ষরিত রক্ত নিভিয়ে দিল খোদার ক্রেধ, কেবল বিশ্বাসে ব্যক্তি হতে পারলো সম্পূর্ণ স্বাধীন, মুক্তপাপ।
কষ্টার্জিত, চূড়ান্ত মুল্যে অর্জিত স্বাধীনতা ক্ষণিকের মাংশিক অভিলাস পুরণ করতে গিয়ে নাপাক করা কারো পক্ষে সাজে না। তবে কুকুর আর শুকরের ক্ষেত্রে কথাটা নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়। কেননা ধৌত শুকর পুনরায় ময়লায় গড়াগড়ি খায় আর কুকুর নিজ বমির দিকে ফিরে।
আমরা মানুষ, আমরা খোদার নয়ণের মণি তুল্য অতীব যতœ আদরে হয়ে চলেছি লালিত পালিত। মসিহ আমাদের ধরে রাখছেন ন্যায়, সত্য প্রেম পবিত্রতা প্রচার করার নিমিত্তে। সমূদয় বিশে^ আজ নতুন জন্মপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ বিস্বস্থভাবে আলোর কেতন নিয়ে ফিরছে। আমাদের রয়েছে অনির্বাণ শিখা যা সদাসর্বদা তুলে রাখতে হবে বিশে^র দরবারে, যাতে কেউ যেন আর অন্ধকারে গুমরে না মরে (মথি ৫ : ১৪-১৬)।